ঝালকাঠিতে নিরাপত্তার অভাবে রোগীর কাছে ভিড়ছেন না চিকিৎসক

নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসকের কাছে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। ছবি: প্রথম আলো
নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসকের কাছে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। ছবি: প্রথম আলো

নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসকের কাছে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। নির্দিষ্ট কক্ষে ওই সব রোগীকে নার্সদের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসকেরা অন্যান্য অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীদের দরজার সামনে একটি চেয়ারে বসিয়ে নিরাপদ দূরত্বে টেবিল-চেয়ারে বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। 

হাসপাতালে জরুরি বিভাগের পাশেই ১৩০ নম্বর কক্ষে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য আলাদা কক্ষ খোলা হয়েছে। সেখানে সাতটি শয্যা রাখা হয়েছে। কক্ষে একজন নার্স জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। প্যারাসিটামল ও ব্যথার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নার্সদের মধ্যেও অসন্তোষ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, ঝালকাঠি জেলার সদর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য মাস্ক, গাউনসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম আজ শনিবার বিতরণ করা হবে।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক রোগী সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জুবায়ের ওয়াশিদ নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা নার্সকে ডেকে জানিয়ে দেন, কোনো কাশি ও জ্বরের রোগী যেন তাঁর কক্ষে না পাঠানো হয়। এ ধরনের রোগী যাবে ১৩০ নম্বর কক্ষে। সেখানে দায়িত্বে থাকা নার্স ইলা সিকদার ব্যবস্থাপত্র লেখার কথা শুনে রাগ করে সেই কক্ষ থেকে চলে যান। চিকিৎসক দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছেন রোগীরা।

শহরের কলেজ সড়কের গৃহবধূ মিনারা বেগম (৩৭) দুই দিন জ্বরে ভোগায় চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসা না নিয়ে হতাশ হয়ে চলে যান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে ডাক্তার জ্বরের রোগী দেখতে ভয় পাচ্ছেন। প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন নার্স। তাঁকেও ১৩০ নম্বর কক্ষে খুঁজে পাইনি।’

কৃষ্ণকাঠি এলাকার জ্বরের রোগী সুখী আক্তার (২২) বলেন, ‘প্রচণ্ড জ্বরের কারণে দাঁড়াতেই পারছি না। ভাবছিলাম হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পাব। কিন্তু ডাক্তার জ্বরের রোগী দেখতে ভয় পাচ্ছেন।’

সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের বিশেষ কক্ষের নার্স ইলা সিকদার বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন দেওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পরে রোগীর সমস্যা হলে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে?’

এ বিষয়ে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জুবায়ের ওয়াশিদ বলেন, ‘আমাদের জন্য মাস্ক, গাউনসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এখনো সরবরাহ করা হয়নি। আমি নিজে সরঞ্জাম কিনে ব্যবহার করে রোগী দেখছি। এ মুহূর্তে সর্দি কাশি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের সরাসরি দেখার মতো পরিস্থিতি নেই। এ জন্য তাঁদের বিশেষ কক্ষ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বেশি সমস্যা হলে হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে।’

সূত্রমতে, সদর হাসপাতালে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রায় ২০ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে তাঁরা চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।

ঝালকাঠি জেলায় মোট ৫৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সদর হাসপাতালে ১৪ শয্যাবিশিষ্ট চারটি করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চারটি শয্যা এবং চিকিৎসকদের একটি আবাসিক ভবনে ১০ শয্যা রাখা হয়েছে। জেলাজুড়ে সতর্কতামূলক বার্তা প্রচার করে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ঢাকা-ঝালকাঠি রুটের লঞ্চ চলাচল।

ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ‘জেলায় মোট ৫৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বহির্বিভাগের সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশফেরত বা তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের বিশেষ দৃষ্টি আছে।’ আজ নিরাপত্তা সরঞ্জাম চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।