করোনাভাইরাস: মানুষের যাতায়াত না কমে বাড়ছে কেন

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠছে যাত্রীরা। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠছে যাত্রীরা। ছবি: প্রথম আলো

করোনার আতঙ্কে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকার। কিন্তু মানুষ কি আসলেই বাড়ি বসে থাকছে? বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রার তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। গত এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে দুই হাজারের চেয়ে বেশি।

পরিবহন খাতের মালিক–শ্রমিকেরা বলছেন, পর্যটন এলাকা ও সীমান্তবর্তী গন্তব্যগুলোয় মানুষের যাতায়াত কমেছে। কিন্তু ঢাকা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর মানুষের গ্রামমুখী যাতায়াত বেড়ে গেছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গড়ে ১৬ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। অথচ ১৩ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত আট দিনে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ৪৬৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ মার্চ সবচেয়ে কম ১৫ হাজার ৪১৪ যানবাহন চলাচল করেছে। আর সর্বোচ্চ যাতায়াত হয়েছে শুক্রবার, ২০ হাজার ১৯৫টি।

গত বুধবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রথমবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর জানায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এরপর থেকেই গ্রামের পথে মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেছে। তিন–চার দিন ধরে ২০ হাজারের কাছাকাছি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মার্চে যানবাহনের চলাচলে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েনি। টোল বাবদ আয়ও বেড়েছে।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগীর কথা জানায় আইইডিসিআর। এখন পর্যন্ত কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। তিনজন সুস্থ হয়েছেন। দুজন মারা গেছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিদেশফেরতদের ১৪ দিন করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগই তা মানছেন না। মাদারীপুরের শিবচর লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সারা বিশ্বেই মানুষের যাতায়াতের ওপর বিধিনিষিধ আরোপ করছে। গণপরিবহন, গণজমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শও এসেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাসে হ্যান্ড সেনিটাইজার রাখা, চালক–শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে জ্বর মাপার যন্ত্র রাখার নির্দেশনা দিয়েই দায় সেরেছে। কিন্তু বাস্তবে দূরপাল্লার বা নগর পরিবহনের কোথাও এই ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। কিন্তু কী করা উচিত আর কী পরিহার করা দরকার, তা মনে স্পষ্ট নয়। অন্যথায় তারা কেন এত যাতায়াত করছে? মানুষ আতঙ্ক ও ঝুঁকি আলাদা করতে পারছে না। বাংলাদেশের গণপরিবহনে সংক্রমণ ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থাই নেই। এই পরিস্থিতিতে বেশি বেশি যাতায়াত মানেই ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্কদের একেবারেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া উচিত নয়।