প্রবাসে 'মৃত্যুকূপে' স্বজন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরিবার

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ঘোষপাড়ার লিটন ঘোষের ১৬ স্বজন ইতালির ভেনিস নগরের পাদুয়া এলাকায় থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও শপিং মলে কাজ করেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাঁদের জন্য শুধু কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন স্বজনেরা।

লিটন ঘোষ বলেন, ‘আমার তিন ভাই ও ভাগনে তাঁদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ইতালিতে থাকেন। তাঁরা এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। জানি না মৃত্যুকূপের মধ্যে তাঁরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন। দেশে বসে এখন শুধু চোখের জল ফেলছি, আর ঈশ্বরকে স্মরণ করছি। গত দুই দিনে ইতালিতে দুজন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবরে উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে।’

শুধু লিটন ঘোষ নন, স্বজনদের নিয়ে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন শরীয়তপুরের অনেক পরিবারের সদস্যরা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরের দেড় লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। এর ৮০ শতাংশ ইতালি ও স্পেনে থাকেন। এর মধ্যে নড়িয়ার বাসিন্দা রয়েছেন ৭০ শতাংশ।

নড়িয়ার উত্তর মশুরা গ্রামের প্রদীপ কর্মকার থাকেন ইতালির রোমে। তিনি সমুদ্রসৈকতে ব্যবসা করেন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তাঁর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয়। তিনি জানান, ইতালির অবস্থা ভালো নয়। একটি মৃত্যুকূপের মধ্যে আছে রোম শহর। সেখানেই তাঁদের বসবাস। তাঁরা একটি কক্ষের মধ্যে অবস্থান করছেন। কত দিনে তাঁরা এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবেন, কেউ বলতে পারছেন না। করোনার প্রভাব কেটে গেলে তাঁরা রোমে ব্যবসা করতে পারবেন কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

মশুরা গ্রামের বাসিন্দা লালা ঘোষ। তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থাকেন। লালা ঘোষ বলেন, ‘আমার স্বজনেরা নিউইয়র্কে ঘরের মধ্যে আটকে আছেন। যখনই যোগাযোগ করি, জানায় ভালো আছেন। কিন্তু করোনার লাগামহীন প্রাদুর্ভাবে আমাদের শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা কমছে না। যখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর পাই, তখন স্বজনদের জন্য উদ্বেগ আর শঙ্কায় চোখের জল ফেলি।’

সদর উপজেলার তুলাশার এলাকার শামীম সিকদার স্পেনের বার্সেলোনা শহরের একটি রেস্তোরাঁর শ্রমিক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয় বার্সেলোনা শহর। শামীমসহ পাঁচ বাংলাদেশি ওই শহরে এক বাসায় থাকেন।

শামীমের স্ত্রী পপি আক্তার বলেন, ‘শামীমের সঙ্গে মুঠোফোনে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। সে রুমের ভেতর আটকা আছে। কাজ বন্ধ থাকায় টাকাপয়সার সংকটে পড়েছে। আমরা বাড়িতে উৎকণ্ঠায় থাকি। যখনই সংবাদমাধ্যমে ইতালি-স্পেনের করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর শুনি, চোখের পানি আটকে রাখতে পারি না।’