গরিবের 'মাস্ক আপা' মিলিতা

বাড়িতে বসে গরিব মানুষের জন্য মাস্ক তৈরি করেন গৃহবধূ মিলিতা চৌধুরী। গতকাল বরিশালের আগৈলঝাড়ার শিহিপাশা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
বাড়িতে বসে গরিব মানুষের জন্য মাস্ক তৈরি করেন গৃহবধূ মিলিতা চৌধুরী। গতকাল বরিশালের আগৈলঝাড়ার শিহিপাশা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা বাজারের উত্তর গলি দিয়ে হেঁটে যেতেই চোখে পড়ল বাজারে দাঁড়িয়ে এক কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে মাস্ক বিক্রি করছেন এক নারী। সঙ্গে মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন করোনার বিস্তার মোকাবিলায় সতর্ক থাকার। কাছে গিয়ে নাম জানা গেল—মিলিতা চৌধুরী (৩০)। গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে নিজে বাড়িতে এসব মাস্ক তৈরি করেছেন।

মিলিতার বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার শিহিপাশা গ্রামে। বাজারে বিভিন্ন ওষুধের দোকানি যখন অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রি করছিলেন, মিলিতা তখন তাঁর মাস্কের দাম রাখছিলেন ২০ থেকে ২৫ টাকা। কথা বলে জানা গেল, করোনার প্রভাব থেকে দরিদ্র মানুষদের রক্ষা করতে নিজেই বাড়িতে মাস্ক তৈরির উদ্যোগ নেন। বাজারে বিক্রির পাশাপাশি এলাকার গরিব মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক বিক্রি করেন। সঙ্গে জানান, করোনা থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। হাঁচি, কাশি, জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে থাকতে হবে আলাদা।

মিলিতা চৌধুরী জানান, স্বামী-সন্তানসহ তাঁর চার সদস্যের পরিবার। দিনমজুর স্বামীর একার আয়ে কোনোরকমে সংসার চলছিল। অর্থসংকটে ছেলে সূর্য চৌধুরী (৯) ও মেয়ে শশী চৌধুরীকে (৫) লেখাপড়া করাতে পারছিলেন না। এ সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন বাড়িতে নারী ও শিশুদের পোশাক তৈরির কাজ করেন। এই আয়ে গত তিন থেকে চার বছরে পরিবারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছে। করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর মাস্ক তৈরি শুরু করেছেন।

সারা দেশে করোনা-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর ওষুধের দোকানগুলোতে মাস্কের দামও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ভালো মানের মাস্ক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আর তুলনামূলক নিম্নমানের মাস্ক ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছিলেন, কম দামে আর বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাস্ক বিক্রি করায় মিলিতা এখন এলাকায় মাস্ক আপা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

মিলিতা বলছিলেন, ‘গরিব মানুষের এত দামে মাস্ক কেনার ক্ষমতা নেই। এই দামে মাস্ক কেনার চাইতে তারা বরং এক বেলার খাবার কিনতে চাইবে। কিন্তু করোনা থেকে বাঁচতে হলে সবারই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এ কথা ভেবেই বাড়িতে মাস্ক তৈরি করে কম দামে বিক্রি শুরু করি। এ কাজে সহযোগিতা করছেন স্বামী দানিয়েল চৌধুরী ও ছেলে সূর্য চৌধুরী।’

মাস্ক তৈরির কাপড় মিলিতা সংগ্রহ করেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। বাড়িতে সেলাই মেশিনে সেই কাপড় দিয়ে দুই লেয়ারের মাস্ক তৈরি করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই এসব মাস্ক তৈরি করা হয় বলেও জানান মিলিতা।

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ডবল লেয়ার (দুই স্তর) দিয়ে তৈরি করায় মাস্কটি স্বাস্থ্যসম্মত। আগৈলঝাড়া ও আশপাশের এলাকা হতদরিদ্র মানুষ-অধ্যুষিত। এখানে বেশি দাম দিয়ে মাস্ক কিনে ব্যবহার করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে মিলিতার উদ্যোগ দরিদ্র মানুষদের একটু হলেও নিরাপদ রাখবে।