হালদায় আবারও ভেসে উঠল মৃত ডলফিন

দেশের একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আবারও ভেসে উঠেছে মৃত ডলফিন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আজিমের ঘাট এলাকায় ভেসে ওঠে অতি বিপন্ন জলজ প্রাণী ডলফিন। এটিসহ গত আড়াই বছরে মোট ২৩টি ডলফিন এ নদীতে একইভাবে মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ওই এলাকায় গতকাল বিকেলে ডলফিনটিকে মরে ভেসে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তাঁরা ডলফিনটি ডাঙায় তুলে আনেন। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন ও স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা মাটিচাপা দেন এটিকে।


হালদা নদী গবেষক ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলফিনটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁরা ধারণা করছেন, নদীতে চলাচল করা বালুবাহী ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকার আঘাতে ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে যে ডলফিনগুলো মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোর একই কারণে মৃত্যু হয়েছিল। 
কর্মকর্তারা জানান, এই ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে দু–তিন দিন আগে। এটির দৈর্ঘ ৬ ফুট আর ওজন প্রায় ৫০ কেজি।

হালদা গবেষকেরা জানিয়েছেন, ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে সরকার নদীতে বালুমহালের ইজারা বাতিল করে। এরপরও বালুবাহী ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকা অবাধে চলছে নদীতে।


গতকাল রোববার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, হালদা নদীর রাউজান অংশের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন, মোকামীপাড়া, উরকির চর ইউনিয়নের দেওয়ানজির ঘাট, মদুনাঘাট, আবুরখিল, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট, গহিরা ইউনিয়নের সত্তারঘাট এলাকায় অবাধে চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও যান্ত্রিক নৌযানের চলাচল। 


স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, সামনে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। এই সময়েও নদীতে বালুবাহি ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকা চলাচল করছে। 


হালদা নদীর আজিমের ঘাটের ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম জানান, নদীতে প্রায় সময় ডলফিন মারা যাচ্ছে। গতকাল মারা যাওয়া ডলফিন তিনি নিজে মাটিচাপা দেন। এর আগে আরও কয়েকটি মরা ডলফিন তিনি ডাঙায় তুলে মাটিচাপা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ডলফিন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত অতি বিপন্ন প্রজাতির একটি জলজ প্রাণী। সারা বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে হালদায় ছিল ১৭০টি ডলফিন। গত আড়াই বছরে যান্ত্রিক নৌযান ও বালুবাহী ড্রেজারের আঘাতে নদীতে মরে ভেসে উঠেছে ২৩টি ডলফিন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নদীতে বালুবাহী ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌ চলাচলের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যার কারণে মা মাছসহ ডলফিন মারা যাচ্ছে অবাধে।


রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা প্রযুষ প্রভাকর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ডলফিনটির মৃতদেহ নদীতে ভেসে ওঠে। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন এটিকে ডাঙায় তুলে মাটিচাপা দেন।


রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবির বলেন, নদী ও জলজ প্রাণী রক্ষায় হালদায় সব বালুমহালের ইজারা বাতিল করেছে সরকার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাতে কেউ বালু তোলা বা যান্ত্রিক নৌকা নদীতে প্রবেশ করাতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। শিগগির আবারও অভিযান চালানো হবে হালদায়।