পুরো হাসপাতাল হচ্ছে আইসোলেশন ইউনিট

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতিসভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন । বগুড়া সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষ, ২২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতিসভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন । বগুড়া সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষ, ২২ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের পুরোটাই আইসোলেশন ইউনিট ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব রোগীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর ও মাথাব্যথার চিকিৎসার বদলে টেলি মেডিসিন বা মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।

আজ রোববার বগুড়ায় আয়োজিত করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি কার্যক্রম মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেলা ১১টায় বগুড়া সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা সমন্বিতভাবে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেবেন। তাঁরা পালা করে ২৪ ঘণ্টা আইসোলেশন ইউনিটে দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

প্রধান অতিথি চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী বা পিপিইর অপ্রতুলতা ও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ভরসার স্থল চিকিৎসক ও নার্সরা, কিন্তু তাঁদের কাছে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছানো যায়নি। তিনি বলেন, পিপিইর সংকট সাময়িক সমস্যা। এ সংকটের জন্য চিকিৎসার মতো মহান পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের দমে গেলে চলবে না। মনোবল ঠিক রেখে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে।

জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ সভায় আরও বলেন, বগুড়া নানা কারণে উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা। জনসমাগমও বেশি হওয়ার কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিও এখানে বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশফেরত ব্যক্তিরা যাতে কোনোভাবেই কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ না করেন, সে জন্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ নজরদারি করতে হবে। সবাইকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। বিনা প্রয়োজনে আগামী দুই সপ্তাহ জনসমাগম এড়াতে চলতে হবে।

প্রচারপত্র বিলি বা স্যানাটাইজার, মাস্ক বিতরণের নামে রাজনৈতিক লোকদেখানো কর্মসূচি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে হুইপ বলেন, সদলবলে প্রচারপত্র বিলিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তা ছাড়া কাগজের তৈরি প্রচারপত্রের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব কর্মসূচির বদলে সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানোর পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, চীন শুধু সতর্কতা আর সুরক্ষার মাধ্যমেই উহানকে করোনামুক্ত করার মতো অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে।

সভায় বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু শাজাহানপুরে নির্মাণকাজ চলছে। এখন ভরসা মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিএমএ বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট ঘোষণার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের ওপর রোগী চিকিৎসাসেবা নেয়। সেখানে করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা দিতে গেলে অন্য রোগীরা ঝুঁকির মুখে পড়বে।

এ সময় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চারদিকে আবাসিক ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। রয়েছে সরকারি ওষুধের কারখানা। এখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ। আবার হাসপাতালে চিকিৎসক-সংকট ছাড়াও নেই আইসিইউ সুবিধা।

সভার শেষ পর্যায়ে হুইপ বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকবে। এ জন্য যত সহযোগিতা লাগে, তা সরকারিভাবে করা হবে। আর মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাসেবার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে সমন্বয় কমিটি করা হবে।