সাংবাদিক আরিফুলের সাজার মামলার কার্যক্রম স্থগিত

আরিফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে সাজা দিয়েছিলেন, তার যাবতীয় কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাঁকে ওই সাজা দেওয়া হয়েছিল।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আরিফুলের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন।

একই সঙ্গে কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আরিফুলের দাখিল করা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরিফুল অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি। তাঁকে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ওই কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ ১৫ মার্চ রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ১৬ মার্চ আদালত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ডের মামলার যাবতীয় নথি তলব করেন। রাষ্ট্রপক্ষকে ২৩ মার্চের মধ্যে ওই সব নথি দাখিল করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

নথিপত্র তুলে ধরে রিটের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, দেখা যাচ্ছে ১৩ মার্চ আদেশ (ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ) শুরু করে ১৪ মার্চ স্বাক্ষর করা হয়েছে। হতে পারে আদেশ লিখতে লিখতে রাত ১২টা বেজে গেছে। সব আদেশ শেষ হলে সাজা পরোয়ানায় সই হয়ে থাকে। আদেশ শেষ করা হয়েছে ১৪ মার্চ, আর সাজা দিয়ে তাঁকে (আরিফুল) জেলে দিয়েছে ১৩ তারিখে। এটি কি সম্ভব আদেশ হওয়ার আগেই উনি (আরিফ) জেলে? দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম রফিকুল ইসলাম এবং পিতার নাম মৃত রফিকুল ইসলাম লেখা আছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হলো? মৃত বাবার অপরাধের ভিত্তিতে আমার (আরিফুল) সই নিয়ে? এই ব্যক্তি আমি (রফিকুল) নই। আমি আরিফুল ইসলাম। এমনকি অপরাধের বর্ণনাও এখানে উল্লেখ নেই। ওই মামলায় আর কী থাকতে পারে?

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আরও বলেন, আইনের ১০ (১) (চ) ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। দুজন সাক্ষীর বক্তব্য নেওয়া হয়। দুজনের বক্তব্যও একই। সন্দেহ করছি টেম্পারিং করা হয়েছে।অ্যাভিডেন্স দৃষ্টে মামলাটি সাজানো। আদালত বলেন, উনি (আরিফুল) এসেছেন? জবাবে ইশরাত হাসান বলেন, উনি এসেছেন। এই পর্যায়ে আদালত বলেন, উনি (আরিফুল) আবেদনকারী হলে ভালো হয়। এরপর সাজার বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন করেন আরিফুল ইসলাম। এর ওপর শুনানি নিয়ে আদেশ দেওয়া হয়। ইতিপূর্বে করা রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেওয়া হয়।


পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৯ মার্চ আরিফুল কুড়িগ্রাম থানায় ওই চারজনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ নিয়ে যান। এই অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আরিফুল ইসলামের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুলসহ এই আদেশ দেওয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই মামলা ও সাজার প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য আইনের মামলার যাবতীয় কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার পর কুড়িগ্রামের জেলার প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর মাদকের ওই মামলায় আরিফুল ইসলাম গত ১৫ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান।