ময়মনসিংহ মেডিকেলে রশির এক প্রান্তে চিকিৎসক অপরপ্রান্তে রোগী

হাসপাতালের একটি কক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্বে রশি বাঁধা। রশির এ প্রান্তে চিকিৎসক, অপর প্রান্তে রোগী। চিকিৎসক রোগীর সমস্যা শোনার আগে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছেন। রোগী বিদেশফেরত কিনা বা বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে ছিলেন কিনা এ ধরনের তথ্য নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসক রোগীর কাছে গিয়ে সমস্যা অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।

আজ সোমবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে রশি বেঁধে দিয়েছেন। রশির অপরপ্রান্ত থেকেই রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন। এভাবে চিকিৎসা পেয়ে রোগীর স্বজনদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) এর ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সাধারণ কাপড়ের গাউন, একটি মাস্ক আর একজোড়া গ্লাভস পড়েই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ এবং টিকিট কাউন্টারে কর্তব্যরত অবস্থায় কাউকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়নি। ভেতরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম সহ রক্ত পরীক্ষাগার সব স্থানেই দায়সারা ভাবে গাউন বা অ্যাপ্রন পড়ে সেবা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

জরুরি বিভাগে দায়িত্বপালনরত দুজন চিকিৎসক বলেন, যতটুকু সম্ভব দুরত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যে গাউন পড়ে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, সেটিকে কোন অবস্থাতেই পিপিই বলা যাবে না। এ জন্য রশি বেঁধে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোনো রোগী এলে প্রথমে তথ্য যাচাই করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে।

বহিঃর্বিভাগে পুরুষ এবং মহিলা কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মচারীরাও কোনো ধরনের পিপিই পরিহিত ছিলেন না। তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্রেও একই চিত্র। সাধারণ একটি মাস্ক পড়েই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তাঁরা।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, 'ডাক্তাররাই পিপিই পাচ্ছেন না, আর আমরা তো কর্মচারী। তাঁরা পেয়ে অবশিষ্ট থাকলে হয়তো আমাদের দেওয়া হবে।' তিনি জানান, ১২শ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন এবং বর্হিবিভাগে হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এভাবে কোনো সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার ছাড়া কাজ করতে গিয়ে তাঁরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গণপতি আদিত্য বলেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য হাসপাতালের অধ্যাপক থেকে পরিচ্ছন্নকর্মী সকলেরই পিপিই পরিধান করা জরুরি। কিন্তু এ নিয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত হারে পিপিই সরবরাহ হচ্ছে না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পিপিই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র ৭০ পিস পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। যা খুবই অপ্রতুল। এগুলো আবার একবার ব্যবহারযোগ্য। তাই গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সেগুলো বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও বেশি পরিমাণে পিপিই বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। আগামীতে আরও পিপিই সরবরাহ করা হলে তা হাসপাতালে বিতরণ করা