ভাসানচরে যাওয়ার সুযোগ আছে, ডিসিরা তালিকা করছেন

এএফপি ফাইল ছবি
এএফপি ফাইল ছবি

দেশের কোনো ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ ভাসানচরে গিয়ে থাকতে চাইলে সুযোগ দেবে সরকার। সেখানে তাদের জীবিকারও ব্যবস্থা করা হবে। তবে ভাসানচরে কেউ যেতে চাইলে তার নাম স্থানীয় জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ভাসানচরে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের প্রতিটি জেলায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সরকার ভাসানচরে মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী জনগোষ্ঠী সরকারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করাতে পারে। ভাসানচরে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহের সুবিধা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকা পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ ব্যাপারে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ শহরে থাকতে চান না। তাঁদের অন্য কোথাও হয়তো থাকার জায়গা নেই। এসব মানুষকে আমরা ভাসানচরে থাকার সুযোগ দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এর আগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে অন্তত ৫৫টি বিষয় সুরাহা করা উচিত বলে মতামত দিয়েছিল জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকা। তাদের নিরাপত্তা, খাবারের সরবরাহ, চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। নৌপথে ভাসানচরে যোগাযোগের ব্যবস্থাও করতে বলেছে উন্নয়ন সংস্থাগুলো। নোয়াখালী বা হাতিয়া থেকে ভাসানচরে সরাসরি নৌযোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা এখন নেই। মেঘনা নদীর যে এলাকায় ভাসানচর, তা কোনো নৌপথের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ ও এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার জন্য বেশ উন্নত মানের আবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সেখানে নেওয়া না গেলে তা অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে এখন যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলো, তা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা খুবই সীমিত হবে। আর একেক জেলা থেকে একেকটি পরিবার এলে তাদের মধ্যে কমিউনিটি তৈরি হয় না। ফলে এ ধরনের বসতি এলাকা সামাজিকভাবে টেকসই হয় না। ফলে এই বিষয়ের সমাধান কীভাবে করা যায়, তাও ভাবতে হবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। বাড়তি টাকা ভাসানচর রক্ষাকারী বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো, আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা, জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে। বরাদ্দ বাড়ার ফলে ভাসানচর রক্ষাকারী বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা হবে।