সাদুল্যাপুর ফাঁকা, ব্যবসায় মন্দা

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর অনেকটা ফাঁকা। আজ সকালে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতাল রোড। ছবি: প্রথম আলো
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর অনেকটা ফাঁকা। আজ সকালে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতাল রোড। ছবি: প্রথম আলো

হাসান মিয়া (৩২) একজন চা বিক্রেতা। বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার জয়েনপুর গ্রামে। উপজেলা শহরের হাসপাতাল রোডে তাঁর চায়ের দোকান। বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। দৈনিক আয় দিয়ে সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি দেন। তারপর যা থাকে, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। হাসান মিয়া বললেন, ‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ শহরে আসছেন না। গোটা শহর ফাঁকা। আগে প্রতিদিন আয় হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখন দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকাও আয় হচ্ছে না। খুব বিপদে আছি। ধারদেনা করে চলছি। আর কত দিন এমনটা চলবে জানি না।’ করোনার কারণে হাসান মিয়ার মতো উপজেলা শহরের অনেক ব্যবসায়ী আজ মঙ্গলবার সকালে এভাবেই তাঁদের ব্যবসা মন্দাভাবের কথা জানালেন।

উপজেলা শহরের কলেজ রোডের কাপড় ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আগে দৈনিক ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। কয়েক দিন থেকে শহরে মানুষ আসছে না। ফলে বিক্রি কমে গেছে। গতকাল এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। আজ সকাল ৮টায় দোকান খুলেছি। এখনো বিক্রি করতে পারিনি। তারপরও বসে আছি, যদি কোনো ক্রেতা আসে।’ একই রোডের ব্যবসায়ী গৌতম কুমার সাহা বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার ঢেউটিন, সিমেন্ট ও রড বিক্রি করতাম। কয়েক দিন থেকে করোনার কারণে বিক্রি কমে গেছে। গতকাল সোমবার ১০০ টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। জমানো টাকা থেকে চা-পান খাচ্ছি।’

উপজেলা শহরের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে বসে আছি। কিন্তু ক্রেতা নেই। আটটার দিকে একজনের কাছে চার কেজি চাল বিক্রি করেছি।’ একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, সকালে তরকারি বিক্রি হয় বেশি। কিন্তু আজ মঙ্গলবার নয়টা পর্যন্ত এক টাকাও বিক্রি হয়নি। এই বাজারে আসা সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর মফিজল হক বলেন, ‘কাঁচাবাজারে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলতো। কিন্তু কয়েক দিন থেকে কাজ পাচ্ছি না। ধারদেনা করে চলছি।’

এদিকে আজ মঙ্গলবারও সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর অনেকটা ফাঁকা। উপজেলা শহরের হাট-বাজারে তেমন লোকজন ছিল না। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। আজ সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে। লোকজন ও যানবাহন চলাচল অনেক কম ছিল। মানুষ শহরে বের হচ্ছে না। যাঁরা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা মাস্ক পড়ে বের হচ্ছেন।

সাদুল্যাপুর উপজেলার একটি গ্রামে বিয়েতে আমেরিকা থেকে আসা দুজন প্রবাসী নিমন্ত্রণ খাওয়ার পর এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা বিয়ে বাড়িতে ১১ ও ১২ মার্চ অবস্থান করেন। দুই আমেরিকাপ্রবাসী ১৩ মার্চ বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ খেয়ে ১৫ মার্চ গাইবান্ধা শহরের আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। তাঁদের দুজনকে গত রোববার থেকে গাইবান্ধা শহরে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। অপর ২০ জনকেও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে উপজেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে আমেরিকাপ্রবাসী দুজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।

অন্যদিকে, করোনাভাইরাসটি দ্রুত সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে গত রোববার উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি এক জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় সাদুল্যাপুর উপজেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য গাইবান্ধা জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০ পর্যন্ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়নি জেলা কমিটি। আজ সকালে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম মন্ডল জানান, বিয়েবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা চার ব্যক্তিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মুঠোফোনে তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এস এম আবু হানিফ বলেন, সাদুল্যাপুরে পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে। ওই বিয়েবাড়ির যাঁরা সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে একটি টিম গতকাল গাইবান্ধায় আসে। তারা বিয়েবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা চারজন এবং আমেরিকা থেকে আসা দুজনের নমুনা নিয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, আজ থেকে গাইবান্ধায় সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে। তারা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করবে।