খালেদার মুক্তিতে স্বস্তির পাশাপাশি আতঙ্কিতও বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপি স্বস্তির পাশাপাশি আতঙ্কিতও বোধ করছেন বলে জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাসপাতাল বা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে নেতা–কর্মীদের ভিড় না করার অনুরোধ জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার রাতে গুলশানের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। আজ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির অনুভূতি কী, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কিছুটা আবেগ আপ্লুত তো বটেই, কিছুটা স্বস্তিও বোধ করছি। আবার কিছু আমরা আতঙ্কিতবোধ করছি এই ভয়ংকর সময়ে তাঁর এই মুক্তি তাঁর কোনো ক্ষতি না ঘটে।’

খালেদাকে মুক্তির সঙ্গে কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এ ছয় মাসে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, অন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারবেন না।

এসব শর্ত প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা (শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি) আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বোধগম্য নয় এ জন্য যে পরিবার আবেদনটা করেছিল তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য। যা–ই হোক, তারপরও বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবং দেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন। দীর্ঘকাল পরে আজ খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি ঠিক সময়মতোই কারাগার থেকে বেরোতে পারবেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তি পেলে সবাই আবেগে আপ্লুত হবেন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য। তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার জীবনের জন্য, অন্য সবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে শান্ত থাকতে এবং দূরে থাকতে হবে।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে এবং ম্যাডামের বাসার সামনে দয়া করে কেউ ভিড় করবেন না। এতে ম্যাডামের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আপনারা জানেন যে উনি অত্যন্ত অসুস্থ, উনি ডায়াবেটিসের রোগী, আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, ৭৫ বছর বয়স, ওনার এজমারও সমস্যা আছে। এসব করোনাভাইরাসের জন্য মারাত্মক সমস্যা অর্থাৎ সবচেয়ে ভালনারেবল হয়ে যায়। আবারও অনুরোধ থাকবে নেতা-কর্মীর প্রতি আপনারা স্বস্তি পেয়েছেন। আমাদেরও দায়িত্বশীল হয়ে পালন করতে হবে।’

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বাসায় তাঁর সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে জানান, খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন না বাসায় চিকিৎসা নেবেন, সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কুদ্দুস।

খালেদা জিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবে সই করেননি প্রধানমন্ত্রী

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার রাতে মুক্তি পাচ্ছেন না। তার মুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবে এখনো স্বাক্ষর করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ৯টার দিকে তিনি বলেন, প্রথমত কোনো বন্দীকে রাতের বেলায় মুক্তি দেওয়া হয় না। 

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রস্তাবে এখনো অনুমোদন করেননি প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র তাঁর কাগজপত্র তৈরি হয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে তিনি অনুমোদন দেবেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারি আদেশ জারি করবে তারপরই তিনি মুক্তি পাবেন। 

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেছেন, তারা কোনো আদেশ পাননি। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাালয়ের কারা শাখারা কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাঠিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।