উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় টাকা তোলার হিড়িক

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের প্রভাবে নড়াইলের লোহাগড়ায় ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কয়েকটি শাখা ব্যাংকের টাকাও ফুরিয়ে যায়। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় কি না, এমন উদ্বেগ ছিল বেশির ভাগ গ্রাহকের।

ব্যাংকের পাশাপাশি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটাও বেড়েছে প্রচুর। আর এসব করতে গিয়ে বাজার ও ব্যাংকে লোকসমাগম বেড়ে গেছে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য চিকিৎসকদের।

টাকা পাবেন কি না, আশঙ্কা
আজ মঙ্গলবার উপজেলা সদরের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিট ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রাহকদের খুব ভিড়। সবাই এসেছেন টাকা তুলতে। টাকা পাবেন কি না, এ আশঙ্কাও দেখা গেছে অনেকের মধ্যে।

সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপাশা শাখায় টাকা তুলতে এসেছিলেন এক চিকিৎসক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় কি না বা পরে টাকা পাওয়া যাবে কি না, এমন আশঙ্কা থেকে টাকা তুলতে এসেছেন।

ইসলামী ব্যাংক লোহাগড়া বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শেখ মাহমুদুর রহমান জানান, আজ সবচেয়ে বেশি গ্রাহক টাকা তুলতে এসেছেন। ব্যাংকের বুথ থেকে আজ প্রায় ৯১ লাখ টাকা এবং এটিএম থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা গ্রাহকেরা তুলেছেন। লোহাগড়া বাজারের সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা, লক্ষ্মীপাশা সোনালী ও বড়দিয়া জনতা ব্যাংকে আজ টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে টাকা ধার চেয়েছিল, তা দিতে পারেননি।

সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপাশা শাখার ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ শাখা থেকে আজ গ্রাহকেরা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। প্রথম দুই ঘণ্টায় টাকা তুলেছেন প্রায় দেড় কোটি। পরে টাকা দিতে পারিনি। এ উদ্বেগের কোনো মানে হয় না।
শেখ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে টাকা তুলছেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ব্যাংকগুলোতে টাকার কোনো সংকট নেই। উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ব্যাংক খোলা থাকবে। প্রতিদিনই টাকা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় “কুইক রেসপন্স টিম” গঠন করা হয়েছে। গ্রাহকদের সেবা ও অর্থনীতি সচল রাখতে এ টিম কাজ করবে।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ কিনছেন কয়েক গুণ
লোহাগড়া বাজারে সবজি ও মুদিদোকানে আজ ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। কাঁচাবাজার ও মুদিদোকানে এ ভিড় দেখা গেছে। অধিকাংশ ক্রেতা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য কিনেছেন। একজন পেঁয়াজ ক্রেতা ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনছেন। তাঁর মধ্যে উদ্বেগ, পরে পাওয়া যাবে কি না, দাম বেড়ে যায় কি না—এসব। তিনি জানালেন, এর আগে এক-দুই কেজি করে কিনতেন।

মুদিদোকানি সজল সাহা জানালেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতারা অতিরিক্ত পণ্য কেনাকাটা করছেন। সবচেয়ে বেশি কিনছেন চিনি, ডাল, তেল, চাল, আটা ও শিশুখাদ্য। অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাঁদের বুঝিয়েও থামানো যাচ্ছে না।

চাল ব্যবসায়ী মফিজ শেখ জানালেন, এক সপ্তাহ ধরে চালের ক্রেতা বেড়ে গেছে। যাঁরা এক-দুই বস্তা কিনতেন, তাঁরা এখন কিনছেন পাঁচ-ছয় বস্তা করে।

পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবসায়ী ইউনুছ শেখ জানালেন, যে ব্যক্তি আগে এক-দুই কেজি কিনতেন, তিনি এখন কিনছেন ৮-১০ কেজি। চার দিন ধরে এ অবস্থা।

ওষুধ ব্যবসায়ী আলম ফার্মেসির এস এম শাহাবুদ্দিন জানালেন, চার-পাঁচ দিন ধরে সব ধরনের ওষুধের বিক্রি বেড়ে গেছে।

কয়েকজন ক্রেতা বললেন, দেশের বাইরে থেকে পরে যেসব পণ্য আসবে, তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, এই আশঙ্কা। এ ছাড়া আগামী ১০-১৫ দিন ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা নেই। এসব কারণে অতিরিক্ত কেনাকাটা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, বাজারে পণ্য ও ব্যাংকে টাকার ঘাটতি হবে না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ নেই। এখন প্রয়োজন সচেতনতা। জনগণ এসব বিষয়ে সচেতন না হলে দু–এক দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।