কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলগুলোতে বিভ্রান্তি

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে ২২ মার্চ জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সরকার পরিচালিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা হবে। তবে এ সিদ্ধান্তের পর আজ মঙ্গলবার এ মন্ত্রণালয়েরই মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে টেলিফোনে দেওয়া নির্দেশে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলগুলোতে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কেননা টেলিফোনে দেওয়া নির্দেশে হোস্টেলগুলো খালি করতে বলা হয়েছে।

ওই দিনের মন্ত্রণালয়ের জরুরি সভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পারভীন আকতার, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাজল ইসলাম, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক জ্যোতি লাল কুরিসহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পারভীন আকতার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে টেলিফোনে বলেন, ‘হোস্টেলগুলো বন্ধ তো করতেই হবে। অফিসসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারি ছুটির পরিপ্রেক্ষিতেই হোস্টেল বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে।’

রাজধানীতে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে।

আজ সন্ধ্যায় কথা হয় নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের হোস্টেল সুপার সাবেকুন নাহারের সঙ্গে। টেলিফোনে তিনি জানান, অধিদপ্তর থেকে লিখিত কোনো নির্দেশ পাননি, তবে টেলিফোনে কর্তৃপক্ষ হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিল। এ নির্দেশ জানানোর পর হোস্টেলে থাকা নারীরা জানান, তাঁরা অনেকেই ব্যাংকে চাকরি করেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে অনেকের পক্ষে এই মুহূর্তে হোস্টেল ছাড়া সম্ভব নয়। তাঁরা হোস্টেলে থাকার জন্য আবেদন করেছেন। বুধবার নারীদের আবেদনের বিষয়টি অধিদপ্তরে গিয়ে জানানো হবে।

সাবেকুন নাহার জানান, হোস্টেলটিতে বর্তমানে ৫০৩ জন কর্মজীবী নারী থাকেন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই সরকারের ১০ দিনের ছুটি ঘোষণার আগেই হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছেন। এখন ২০ থেকে ২৫ জনের মতো আছেন। যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোর জন্যই অধিদপ্তর থেকে হোস্টেল ছাড়ার কথা বলা হয়েছিল।

কর্মজীবী হোস্টেলগুলোর হোস্টেল সুপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোস্টেলগুলোতে কোনো চিকিৎসক বা অ্যাম্বুলেন্স নেই। ঈদসহ সরকারি ছুটিতে লিফট বন্ধ থাকে। কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁকে নিয়ে যে পরিস্থিতি হবে, সে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের হোস্টেল সুপার রাহেনুর বেগম বললেন, এই মুহূর্তে হোস্টেল বন্ধ করা সম্ভব নয়। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হোস্টেলের বাবুর্চিও থাকতে চাচ্ছিলেন না। বাবুর্চিকে বুঝিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোস্টেলটিতে ২০০ জনের বেশি নারী থাকেন। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো হোস্টেলে অবস্থান করছেন।

রাহেনুর বেগম বলেন, ‘হোস্টেলে যাঁরা আছেন তাঁদের বলেছি দেশের এই পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েই হোস্টেলে থাকতে হবে। প্রতিবেলা মাছ, মাংস খাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। সবাই মিলে কোনোভাবে থাকতে হবে। আর সরকার যে (সব মিলে ১০ দিন) ছুটি দিয়েছে, তা তো আর ঈদ বা আনন্দ ফুর্তি করার ছুটি তো না। সরকার ছুটি দিয়েছে যে যেখানে আছে সেখানেই যাতে ঘরে থাকে।’

মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি দেওয়া হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিকালীন অবশ্যই নিজ নিজ কর্ম এলাকায় (যিনি যে এলাকায় চাকরি করেন) অবস্থান করতে হবে। আগের দিন সোমবার সরকারি নির্দেশনায় ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস ১০ দিনের ছুটিতে পড়ছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পাঁচ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আর ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় ১০ দিনের ছুটিতে থাকবে সারা দেশ।

এদিকে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে।