'কেউ ভালো আচরণ করছেন না, কটু কথা শোনাচ্ছেন'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুরের নড়িয়ার একটি গ্রামের একজন ইতালির ভেনিসে থাকেন। ইতালিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি নড়িয়ায় চলে আসেন। দেশে এসে তিনি অবাধে আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসীর সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। পরে সরকারি নির্দেশে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। প্রবাসীর বাড়ি হিসেবে পুলিশ তাঁর বাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে গেছে। এ নিয়ে ওই প্রবাসী ও তাঁর স্বজনদের নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ওই প্রবাসী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনের ভয় কার না আছে? একটু নিরাপদে থাকতে ইতালি থেকে চলে এসেছি। এসে পড়েছি আরেক বিপদে। আমি এসেছি ২৫ দিন হয়ে গেছে। তারপরও এলাকায় নানা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এলাকার মানুষ ভালো আচরণ করেন না, বাঁকা চোখে তাকান, এড়িয়ে চলেন। আমি সংক্রমিত নই—এটা কেউ বুঝতে চান না। এমন পরিস্থিতি হবে বুঝতে পারলে দেশে ফিরতাম না।’

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রবাসীরা দেশে এসে যথাযথ নিয়ম মানছেন না। ফলে তাঁদের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। প্রবাসীরা এক মৃত্যুকূপ থেকে এসে বাংলাদেশকে আরেক মৃত্যুকূপ বানাচ্ছেন। এসব কারণে এই মুহুর্তে প্রবাসীদের প্রতি স্বজন, গ্রামবাসী ও প্রশাসনের লোকজন বিরক্ত। ফলে তাঁদের সামাজিক গঞ্জনার শিকার হতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে কটু কথা।

সদর উপজেলার এক ব্যক্তি থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায়। তিন মাসের ছুটি কাটাতে ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন। ১০ মার্চ পর্যন্ত তিনি গ্রামে ঘুরেছেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখে। তবে হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কেউ ভালো আচরণ করছেন না, কটু কথা শোনাচ্ছেন—এমন অভিযোগ ওই প্রবাসীর।

শরীয়তপুর পৌরসভার এক ইতালিপ্রবাসী তরুণ ৪ মার্চ বাড়িতে আসেন। পরিবারের অনুরোধে তিনি দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, এখন বাড়ির বাইরে গেলে নানা অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। এলাকার মানুষ তাঁকে এড়িয়ে চলেন। বাসার ভেতর থাকার পরামর্শ দেন। ওই তরুণ গতকাল বলছিলেন, ‘আমাদেরই কোনো প্রবাসীর ভুলে ও অসচেতনতায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের ভুলের মাসুল এখন পুরো জাতিকে দিতে হচ্ছে। এ কারণে মানুষের যত রাগ আর ক্ষোভ এখন আমাদের প্রতি।’

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরের দেড় লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। এর ৮০ শতাংশ ইতালিতে থাকেন, যার মধ্যে নড়িয়ার বাসিন্দা ৭০ শতাংশ। ইতালিপ্রবাসীরা প্রতিনিয়ত শরীয়তপুরে যাতায়াত করছেন। ইতালিতে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও শরীয়তপুরে ইতালিপ্রবাসীরা আসছেন।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১১ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৬৪ ব্যক্তি বিদেশ থেকে ফিরেছেন, যাঁদের বাড়ি শরীয়তপুরে। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত এখানকার আরও পাঁচ হাজার প্রবাসী ফিরেছেন। এর মধ্যে ৩৬০ প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। আর ১৬২ প্রবাসীর হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকায় প্রবাসীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা মানেননি। পরিণামে আমরা মৃত্যুর মিছিলে শামিল হলাম। এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে পুরো দেশ আজ উদ্বিগ্ন। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্য করতে কিছু কিছু স্থানে কঠোর হতে হয়েছে। কোনো প্রবাসীকে যদি কেউ বিরক্ত করেন বা বিব্রত করেন, তাহলে তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।’