সাদুল্যাপুরে দোকানপাট বিকেল থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

করোনার আতঙ্কে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের দোকানপাট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হলেও অনেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলছেন না। আজ সকাল ১০টায় শহরের ব্যস্ততম মীরপুর রোডের হাইস্কুলের সামনে থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
করোনার আতঙ্কে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের দোকানপাট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হলেও অনেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলছেন না। আজ সকাল ১০টায় শহরের ব্যস্ততম মীরপুর রোডের হাইস্কুলের সামনে থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের সব দোকানপাট বিকেল পাঁচটা থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা বণিক সমিতি এই সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে উপজেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ওষুধ ও মুদি দোকান এর আওতার বাইরে থাকবে।

আজ বুধবার সকালে উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি জানান, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল নয়টা পর্যন্ত উপজেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সীমিত আকারে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর অনেকটা ফাঁকা। গত সোমবার থেকে এই অবস্থা চলছে। আজ সকালে উপজেলা শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে কিছু লোকজন থাকলেও হাট-বাজারে তেমন লোকজন ছিল না। যানবাহন চলাচল অনেক কম ছিল। বিকেল পাঁচটার পর থেকে দোকানপাট পুরোদমে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও আজ সকাল সাড়ে নয়টায়ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে কম। মাস্ক না পরে কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। শহরের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘দিনে দোকান খুলে লাভ কী। লোকজনই তো শহরে আসে না, কার কাছে বিক্রি করব।’

সাদুল্যাপুর উপজেলার হবিুল্যাপুর গ্রামে ১১ মার্চ এক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ৫ শতাধিক আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানে আমেরিকা থেকে আসা দুজন আত্মীয় যোগ দেন। তাঁরা ওই বাড়িতে ১১ ও ১২ মার্চ অবস্থান করেন। বিয়ে উপলক্ষে ১১ মার্চ থেকে ওই বাড়িতে দুই আমেরিকা প্রবাসীসহ ২২ জন আত্মীয়স্বজন কয়েক দিন অবস্থান করেন। এরপর তাঁদের অনেকে ২১ মার্চ গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের উপনির্বাচনে ভোট দেন। এর মধ্যে আমেরিকাপ্রবাসী দুজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তাঁদের দুজনকে গত রোববার থেকে গাইবান্ধা শহরে হোম কোয়ারেন্টিনে (বাড়িতে পৃথক কক্ষে) রাখা হয়। অপর ২০ জনকেও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

এদিকে করোনায় আক্রান্ত আমেরিকা প্রবাসী মা-ছেলের সংস্পর্শে আসা সাদুল্যাপুর, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও বগুড়া জেলার শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে গাইবান্ধায় আসা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা করোনায় আক্রান্ত ওই দুজনের সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও খোঁজ অব্যাহত রেখেছেন। এ কারণে স্থানীয় জনসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি এক জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় সাদুল্যাপুর উপজেলা লকডাউন (বদ্ধাবস্থা) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়নি জেলা কমিটি।

উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, ‘সাদুল্যাপুর লকডাউনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরাই নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, যেহেতু এটি মফস্বল শহর। স্থানীয় লোকজন সাংসারিক কাজকর্ম শেষ করে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিকেলের পর উপজেলা শহরে আসেন। আবার অনেকে হোটেল বা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেন। এ কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ জানান, করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা শতাধিক আত্মীয়স্বজনকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চিহ্নিত করে গাইবান্ধায় আসা আইইডিসিআরের ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া তারা করোনায় আক্রান্ত ওই দুজনের সংস্পর্শে আসা অন্যদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত চিহ্নিত ব্যক্তিসহ পরিবারের সদস্যদের নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, শনাক্ত করা শেষ হলে এদের মধ্যে যাদের করোনার উপসর্গ দেখা দেবে, তাদের রক্ত ও কফসহ শরীরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে ওই প্রতিনিধিদল।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, গতকাল থেকে গাইবান্ধায় সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। গতকাল তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। আজ বুধবার থেকে তাঁরা মাঠে কাজ করবেন।