করোনা: চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে

>চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর পাশাপাশি তাঁদের খাদ্য, বিশ্রাম ও মানসিক সহায়তার ব্যাপারেও নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যবিদ, গবেষক ও রাজনীতিবিদেরা। ঠিক সেই সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বুকে সাহস বেঁধে কর্মস্থলে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট তাদের সম্পাদকীয়তে বলছে, বর্তমান সময়ে প্রতিটি দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যানুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত দেশে ৩৩ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে ​শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্সও রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন চিকিৎসক কোয়ারেন্টিনে (সংগনিরোধ) আছেন। 

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আরও একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেলফ কোয়ারেন্টিনে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগী ২২ মার্চ মারা যান। মৃত্যুর পর পরীক্ষা করে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ছিল বলে নিশ্চিত হওয়ায় চিকিৎ​সকেরা এ সিদ্ধান্ত নেন।

সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (জেআরআরএমসি) ১৫০ ইন্টার্ন চিকিৎসক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) দাবিতে দুই দিন ধরে কর্মবিরতিতে আছেন। তাঁরা জানান, পিপিই ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ায় দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁরা কর্মবিরতিতে গেছেন। 

সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক নেতারা ভীত না হয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

কিন্তু কয়েক দিন ধরে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মূল অভিযোগ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা ছাড়াই তাঁরা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা ভেবে চিকিৎসকেরা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, এমন অভিযোগও আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, অতিক্ষুদ্র ভাইরাস, প্রায় অদৃশ্য এক শক্তির বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব যুদ্ধে নেমেছে। সেই যুদ্ধে একেবারে সামনের সারিতে চিকিৎসক, নার্সরা। এঁদের সুরক্ষার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। শুধু পিপিই দেওয়াই যথেষ্ট নয়, এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সহমর্মী হওয়া এই সময়ে খুবই জরুরি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’কে (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এর উদ্দেশ্য একজন থেকে অন্যজনে যেন ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটে। তাই মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যেতে হবে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাঁরা হাসপাতালে বা ক্লিনিকে যাবেন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। 

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বলছে, সে দেশে মার্চ মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। ইতালিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। দেশটিতে আক্রান্তদের সেবাদানকারী ২০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ মারাও গেছেন। ল্যানসেট বলছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে চরম বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েন, রোগী ও সহকর্মীদের মৃত্যুতে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হন।