চিকিৎসায় নিয়োজিতদের জাতীয় বীর ঘোষণা কেন নয়: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতাল-চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা–যোদ্ধা হিসেবে জাতীয় বীরের মর্যাদা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত এ রুল দেন।

আদালত বলেছেন, দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক পালিয়ে গেছেন। চিকিৎসকের মধ্যেও একধরনের আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রে অন্য রোগীও আছে, যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। এ অবস্থায় রুল জারি করা হচ্ছে।

রুলে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যদি চিকিৎসাকেন্দ্রের কোনো চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাহলে তাঁদের শহীদের মর্যাদা দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সবাই কাজ করবেন’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুসারে সবাই কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে দেশে আগতদের সংশ্লিষ্ট বন্দর থেকে বাধ্যতামূলক সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন কোয়ারেন্টিন রাখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট নিষ্পত্তি করে ওই পর্যবেক্ষণ দেন আদালত।

আদালত বলেছেন, ‘নতুন এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। একদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে সারা পৃথিবীর মানুষ। করোনার বিরুদ্ধে সবাই। তাই করোনা সংক্রমণ রোধে দলমত–নির্বিশেষে সবার এক হয়ে কাজ করতে হবে। চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস দেশটির কাছাকাছি অবস্থিত তাইওয়ান লকডাউন করে সফল হয়েছে। এর থেকে বাঁচার উপায় লকডাউন। করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি মানুষ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যাবেন বলে আশা রাখি।’

মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনজীবী মো. হ‌ুমায়ন কবির ১৭ মার্চ ওই রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ পিপিই
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ১০ লাখ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে ২৬ মার্চের মধ্যেই এক লাখ সংগ্রহ করা হবে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক-নার্স-কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এরপর ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনটি দাখিল করার কথা জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ২২০টি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ইতিমধ্যে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যসচিবের পাঠানো প্রতিবেদনে এসেছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে পিপিইর তালিকা তৈরির জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি আগামী ৫ এপ্রিল তালিকায় আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পিপিই গ্রহণ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে বিতরণ করা হচ্ছে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত মজুত ও বিতরণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুসারে, ৩ লাখ ৫০ হাজার পিপিই সংগ্রহ করা হয়। ২ লাখ ৮৫ হাজার পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। ৬৫ হাজার মজুত আছে।