মানসিক ভারসাম্যহীন সামছুদ্দিন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি কত দূর

মানসিক ভারসাম্যহীন সামছুদ্দিন মিয়া প্রায় দিনই রাজবাড়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে এসে বসে থাকেন। ছবি: এজাজ আহম্মেদ
মানসিক ভারসাম্যহীন সামছুদ্দিন মিয়া প্রায় দিনই রাজবাড়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে এসে বসে থাকেন। ছবি: এজাজ আহম্মেদ

রাজবাড়ীতে ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বোন। মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের নাম সামছুদ্দিন মিয়া (৭২)। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর কোনো সন্তান নেই। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দার ফায়ার সার্ভিস এলাকায়।

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে তাঁর পক্ষে আবেদন করা হয়েছে।

সামছুদ্দিন মিয়ার বোন অহিদা আক্তার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমার ভাই ’৭১–এর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিবার্তায় আমার ভাইয়ের নাম ছিল। ক্রমিক নম্বর ০১১১০১০২৭। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে সংবর্ধনাও পেয়েছিলেন। ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে ভাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর ভাইয়ের স্ত্রী অন্যত্র চলে যায়। অজ্ঞাত কারণে তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়।’

অহিদা আক্তার জানান, তাঁর ভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এ–সংক্রান্ত একটি প্রত্যয়নপত্রও রয়েছে। ১৯৯৮ সালে রাজবাড়ী সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ তালেব এই প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন। প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘স্বাধীনতাসংগ্রামে সামছুদ্দিন মিয়া ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন রাজবাড়ী থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।’

অহিদা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কোনো সন্তান নেই। কোনো আয়ের উৎস নেই। এখানে–সেখানে ঘুরে বেড়ান। তাঁকে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবাও দিতে পারি না। খুব মানবেতরভাবে জীবন যাপন করছে আমার ভাই।’

আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, সামছুদ্দিন মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৮ নম্বর সেক্টরের অন্যতম কমান্ডার প্রয়াত ইলিয়াস মিয়ার অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। অনলাইনে দুবার আবেদন করেও তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা যায়নি। এখন তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পথে পথে ঘুরছেন। ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার এম এ তালেব বলেন, ‘সামছুদ্দিন মিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কীভাবে তাঁর নাম বাদ গেল, তা জানি না। তাঁর বোন আবেদন করেছেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে তালিকা থেকে অনেকের নামই বাদ গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমার করার তেমন কিছু নেই।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই–বাছাই কার্যক্রম ২০১৭ সালে শেষ হয়েছে। তখন তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন না। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর তিন ধরনের তালিকা করা হয়। ক, খ ও গ তালিকা। ক তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। খ তালিকা নিয়ে কমিটির আপত্তি ছিল। আর গ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা নন বলে কমিটির সবাই একমত ছিলেন। আবারও প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি বিষয়টি নিজ দায়িত্বে দেখবেন। কোনো মুক্তিযোদ্ধাই যাতে বাদ না পড়েন, সেদিকে তিনি খেয়াল রাখবেন।