করোনা ঠেকাতে বাঁশের বেড়ায় পাড়া বন্ধ

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বান্দরবানের চিম্বুকপাহাড়ের ম্রোরা তাদের পাড়াগুলোতে বাইরের লোকজন ঢুকতে নিষেধ করেছেন। বাঁশের বেড়া দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার চার-পাঁচটি পাড়ায় ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্য পাড়াগুলোতেও বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে পাড়াবন্ধ করা ম্রোদের ঐতিহ্য বলে ম্রো নেতারা জানিয়েছেন।

মুঠোফোনে চিম্বুক পাহাড়ের কয়েকজন ম্রো বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবান-থানচি সড়কে রাংলাই চেয়ারম্যানপাড়া, ইনচংপাড়া, জামিনীপাড়া, বাগানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়ার রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাংলাই চেয়ারম্যানপাড়ার রাস্তার মাথায় বাঁশের বেড়া দিয়ে ম্রো ও বাংলা ভাষায় হাতের লেখা ব্যানারে 'করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষেধ' লিখে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পাড়াগুলোতে এখনো বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়নি। তবে বাইরের লোকজন ঢোকা একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাও কয়েক দিনের মধ্যে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেবেন বলে জানিয়েছেন।

রাংলাই চেয়ারম্যানপাড়ার লেংপুং ম্রো বলেন, পাড়াবাসী সবাই মিলে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাস্তা খুলে দেওয়া হবে না। জামিনীপাড়ার সিংরাও ম্রো বলেন, তাদের পাড়ায় গত সপ্তাহ থেকে বাইরের লোকজন আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চিম্বুক পর্যটন (চিম্বুকের চূড়া) এলাকার পাশে চিম্বুক বাগানপাড়ার তবুক ম্রো বলেন, পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় এমনিতে বাইরের লোকজন নেই। তারপরও পাড়ায় যাতে কেউ ঢুকতে না পারে, সে জন্য কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। টংকাবতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য চিংতুই ম্রো বলেন, তাদের রামরি পাড়ায় এখনো ঢোকার পথে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়নি। কিন্তু বাইরের কাউকে এখানে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

বসন্তপাড়ার বাগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত তোয়ো ম্রো বলেছেন, চিম্বুকে প্রায় সবাই ফল চাষি হলেও ফল ব্যবসায়িদের না আসতে বলে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের আশঙ্কা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে ফল বিক্রি বন্ধ রাখা হবে।

ম্রো সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো জানিয়েছেন, পর্যটনের জন্য আকর্ষনীয় চিম্বুক পাহাড় ও এখাকার ম্রো জনবসতিগুলো। পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় বান্দরবান-থানচি সড়ক হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত দেড় শতাধিক ম্রোপাড়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে। এ জন্য ওই পাড়াগুলোতে বাইরের লোকজন ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমা পর্যন্ত এ রকম 'পাড়া লকডাউন' থাকবে। তবে পাড়াবাসীর দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিক থাকবে।

নোয়াপাড়ার ইংচ্যং কার্বারী (পাড়াপ্রধান) বলেছেন, ম্রোরা আগে প্রতি বছর একটি সময়ে পাড়াবন্ধ করতেন। এখন নানা কারণে হয় না। এবারে আবার পাড়াবন্ধ নিয়ম ফিরে আসছে। পাড়াবন্ধের সময় বাইরের কেউ ঢুকলে জরিমানাসহ শাস্তির বিধান আছে।

ম্রোভাষার লেখক ইয়াংঙান ম্রো বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্রো শিক্ষার্থীদের কাছে ও গণমাধ্যমে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ম্রোরা জেনেছেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রচারপত্র ম্রোভাষায় অনুবাদ করে পাড়ায় পাড়ায় বিতরণ করা হয়েছে। এ জন্য পাড়াবাসী সচেতন হয়েছেন। এখন পাড়াগুলোতে বাইরের লোকজন কেউ ঢুকতে পারবেন না।