করোনার সংক্রমণের শঙ্কায় ঢাকা ছাড়লেন ৩৫০ বিদেশি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় মালয়েশিয়া ও ভুটানের প্রায় সাড়ে ৩০০ নাগরিক আজ বৃহস্পতিবার আলাদা তিনটি ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এর মধ্যে ভুটানের ড্রুক এয়ারের দুটি ফ্লাইটে ভুটানের ১২৪ নাগরিক এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে সে দেশের অন্তত ২৩০ জন নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া ড্রুক এয়ারের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশের দুজন নাগরিক রয়েছেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় মালয়েশিয়া হাইকমিশন ও ভুটান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে শ্রীলঙ্কার প্রায় সাড়ে ৪০০ নাগরিকও আগামী দু–এক দিনের মধ্যে ঢাকা ছাড়তে পারেন। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাঞ্জেলো লিয়ানাগে গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষেকে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে শ্রীলঙ্কার আগ্রহী নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে কলম্বো যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অনুমতি পেলে শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা শুক্রবার থেকে রোববারের মধ্যে কলম্বো যেতে আগ্রহী।

ভুটান দূতাবাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ভুটানের ড্রুক এয়ারের দুটি বিশেষ ফ্লাইটে ১২৬ জন ঢাকা ছেড়ে গেছেন। ওই দুই ফ্লাইটে থাকা ভুটানের নাগরিকদের মধ্যে পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী রয়েছেন। কোনো কূটনীতিক ও কূটনীতিকের পরিবারের কোনো সদস্য নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, ড্রুক এয়ারে ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল করিমের দুই ছেলেও রয়েছেন।

ভুটান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনো দূতাবাসের কোনো কর্মী ফেরেননি। তবে তারাও উদ্বিগ্ন, এখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ কতটা ভয়ংকর হয়, সেই শঙ্কায়। দূতাবাসের সবাই এখনো সুস্থ ও নিরাপদে আছেন বলে সরকারকে জানিয়েছে ভুটান মিশন।

ভয়াবহতার আশঙ্কায় দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন বিদেশিরা। উদ্বিগ্ন কূটনীতিকেরাও তাঁদের পরিবার-পরিজনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন।

মালয়েশিয়ান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, গতকাল বুধবার রাতে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশটির প্রায় ২৩০ জন নাগরিক ঢাকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন। এরা সবাই ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থায় কর্মরত। শুরুতে ওই ফ্লাইটে ২২৫ জনের যাওয়ার কথা ছিল। পরে বিমানবন্দরে উপস্থিত মালয়েশিয়ার আরও পাঁচ নাগরিক ওই ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে যান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিকদের একটি অংশও ঢাকা ছাড়তে চায়। এ নিয়ে ঢাকায় ইইউ দেশের কূটনীতিকেরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইউরোপের কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, যেকোনো দেশ চাইলে ভাড়া করা উড়োজাহাজে তাদের নাগরিকদের ঢাকা থেকে দেশে নিয়ে যেতে পারে। তবে যে উড়োজাহাজ ঢাকায় আসবে, সেটিকে কোনো যাত্রী ছাড়াই ঢাকায় আসতে হবে। এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ বিমান এরই মধ্যে সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। চাইলে বাংলাদেশ বিমান ব্যবহার করেও ইউরোপের দেশগুলো তাদের নাগরিকদের দেশে নিয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, এ মুহূর্তে ইইউভুক্ত দেশগুলোর ৬০০ নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে জার্মানির নাগরিকের সংখ্যা শতাধিক।