লকডাউন এড়িয়ে দেশে ফিরলেন দম্পতি

ইয়াকুব আলী ও স্ত্রী শিরিনা বেগম। চিকিৎসা করাতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন তাঁরা। ছবি: প্রথম আলো
ইয়াকুব আলী ও স্ত্রী শিরিনা বেগম। চিকিৎসা করাতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন তাঁরা। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভারতজুড়ে চলা লকডাউনের ফাঁদে পড়েছিলেন বাংলাদেশের কুমিল্লার এক দম্পতি। আগরতলায় খোলা আকাশ, হাসপাতাল ও হজ ক্যাম্পে দুই দিনের চরম ভোগান্তি শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরা এই দম্পতি হলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের ইয়াকুব আলী (৫২) ও তাঁর স্ত্রী শিরিনা বেগম (৫২)।
ইয়াকুবের লিভারে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের চেন্নাই যান এই দম্পতি। ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় বিমানে চেন্নাই থেকে কলকাতা হয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছান। সেখানে পৌঁছেই তাঁরা লকডাউনে আটকা পড়েন।
আজ দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দরের চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ইমিগ্রেশনে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গত দুই দিনের কষ্টের বর্ণনা দেন শিরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আগরতলা শহরে কোনো আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউস খোলা ছিল না। পুরো শহর মানুষ শূন্য ছিল। কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়। সেখানকার গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁদের অসহায়ত্বের খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রচার করে। বিষয়টি আগরতলা পুলিশ প্রশাসন ও ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের নজরে আসে। পরে ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনারের সহযোগিতায় ২৪ মার্চ তাঁদের সেখানকার আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরের দিন সেখান থেকে তাঁদের আগরতলা হজ ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়। আজ সকালে ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের একটি গাড়িতে করে তাঁদের আগরতলা ইমিগ্রেশনে নেওয়া হয়। ইমিগ্রেশনে প্রবেশের পর সেখানকার কর্তব্যরত বিএসএফ সদস্যরা আবার আটকে দেন। আবারও সেখানকার গণমাধ্যমকর্মী বাংলাদেশের উপহাইকমিশনারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। ত্রিপুরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন তাঁরা।’
শিরিনা বেগম বলেন, ‘ত্রিপুরা রাজ্যে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়ায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অসুস্থ ইয়াকুব আলী বলেন, ‘এমন দুর্ভোগ বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই। ধন্যবাদ জানাই আগরতলায় গণমাধ্যমকর্মীদের।’
ভারতের ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, আগরতলার সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই দিন রাতেই বাংলাদেশি দম্পতিকে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরীক্ষার পর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় তাঁদের দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়।
আখাউড়া ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আবদুল হামিদ বলেন, ভারতে লকডাউনের মধ্যেও আজ দুপুর পর্যন্ত শিরিন দম্পতিসহ ১৫ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ইয়াকুব দম্পতিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।