শরীয়তপুরে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ, সহায়তা দেবে প্রশাসন

ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ও মুদিদোকান ছাড়া শরীয়তপুরে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা নেই। ছবি: প্রথম আলো
ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ও মুদিদোকান ছাড়া শরীয়তপুরে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা নেই। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ও মুদিদোকান ছাড়া শরীয়তপুরে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা নেই। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয় ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মজীবী মানুষ। তিন দিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। ফলে কাল শনিবার থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। বন্ধ করা হয়েছে গণপরিবহন। এর আগে সোমবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ওষুধ, খাবার ও কাঁচামালের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে। ওই দিন রাত থেকেই পুলিশ সব দোকান বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। গত মঙ্গলবার আর কেউ দোকান খুলতে পারেননি। এতে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে খাদ্যসংকটে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সংকট সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রত্যেককে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি মসুর ডাল ও একটি সাবান দেওয়া হবে।

শরীয়তপুর পৌর বাস টার্মিনালে চায়ের দোকান চালান শওকত হোসেন। তাঁর পরিবারে ছয় সদস্য। চায়ের দোকানের আয় দিয়েই চলে তাঁর সংসারের যাবতীয় ব্যয়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে তাঁর দোকান বন্ধ। শওকত বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। প্রতিদিন যা আয় হয়, তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাই। একটা চায়ের দোকানে কত টাকা আয় করা যায়? তা দিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে কী কষ্ট হয়, তা আমার মতো মানুষেরাই বুঝে। গত তিন দিন অনেক কষ্ট করে চলছি। সামনের দিনগুলোর কী হবে, তা বুঝতে পারছি না। হয়তো আল্লাহই সহায় হবেন।’

পৌরসভার চর পালং এলাকার বাসিন্দা ফজর আলী একটি খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের ভ্যানচালক। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন তিনি। মঙ্গলবার থেকে তাঁর কাজ বন্ধ। এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ফজর আলী বলেন, ‘প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করি। যেদিন কাজ থাকে না, সেদিন টাকা পাই না। ছয় সদস্যের সংসার। স্বল্প আয়ের মানুষ আমি। কোনো সঞ্চয় নাই। এখন কাজ বন্ধ, কীভাবে সংসার চালাব?’

সদর উপজেলার বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা পান্না আক্তার মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। বাংলাদেশে করোনার প্রভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে তাঁর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এক সপ্তাহ তিনি জেলা শহরের একটি হোটেলে পানি সরবরাহ করে কিছু টাকা আয় করেছিলেন। মঙ্গলবার থেকে তা–ও বন্ধ। পান্না আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। দুটি মেয়ে স্কুলে পড়ে। দিনরাত পরিশ্রম করে সংসারের খরচ ও মেয়েদের পড়ালেখার টাকা জোগাড় করতে হয়। করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ সবকিছু অচল হয়ে গেল। কীভাবে সংসার চালাব, ভাবতেই পারছি না। কত দিন এ দুর্যোগ থাকে, আল্লাহই জানে।’

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, করোনাভাইরাস যাতে বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকা উচিত। সরকারের ঘোষণা মেনে ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। খাদ্য কোনো সমস্যা নয়। সরকার নিম্ন আয়ের ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দিতে শুরু করেছে। কাল শনিবার থেকে শরীয়তপুরের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।