খালেদা জিয়ার সুস্থতা আগে, রাজনীতি পরে

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

শর্ত সাপেক্ষে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তিতে স্বস্তি ফিরেছে বিএনপিতে। এখন দলের নীতিনির্ধারকদের সব মনোযোগ খালেদা জিয়ার শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে। তিনি সুস্থ-সবল হয়ে আবার রাজনীতিতে কীভাবে সক্রিয় হবেন, সে চিন্তাও করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে এই মুহূর্তে কারাবন্দিত্বের চাপ কাটিয়ে তুলে দলীয় প্রধানকে সুস্থ রাখাই নেতাদের মূল চিন্তা।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত বুধবার মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় ফেরার পরপরই খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎ​সকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁর সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন চিকিৎ​সক ও একজন নার্স। নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিগগিরই তাঁর চিকিৎ​সা শুরু হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই খালেদা জিয়াকে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ রাখা হয়েছে। তিনি ফিরোজা ভবনের দোতলা থাকছেন। সেখানে নিকটাত্মীয়দের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার কক্ষে যেতে হলে পাশের আরেকটি কক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) বাসায় এসেছেন। ওনার মধ্যে একটা মানসিক প্রশান্তি এসেছে। কালকে সেটা আমরা লক্ষও করেছি। বাসায় আসার পর তিনি ভালো বোধ করছেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশানের বাসাতেই খালেদা জিয়ার চিকিৎ​সা হবে। তবে খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎ​সক থাকেন লন্ডনে। তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে ঢাকার চিকিৎ​সকেরা শিগগির খালেদা জিয়ার চিকিৎ​সা শুরু করবেন। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান লন্ডনে ও ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের তো ইচ্ছে ছিল উনি মুক্তি পেলে আমরা বিদেশে পাঠাব উন্নত একটা হাসপাতালে। কিন্তু সেটা তো হয়নি। সে জন্য দেশেই যাতে উনি সর্বোচ্চ চিকিৎ​সা পান, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে চিকিৎ​সার বাইরে খালেদা জিয়াকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছেন না দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাই যে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি সতর্ক থাকবে। সরকার রুষ্ট হয়ে ভিন্ন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন কোনো কার্যক্রম বা কর্মসূচি নেবেন না নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে দল পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাই আইনিভাবে খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে না আসা পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বেই দল পরিচা​লিত হবে।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাময়িক মুক্তি পেলেও আইনগতভাবে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। তাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই দল চালাবেন, আর তিনি তো খারাপও চালাচ্ছেন না। এর মধ্যে চেয়ারপারসন সুস্থ হয়ে গেলে তো কথাই নেই।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাবন্দী থাকার কারণে এত দিন ​দলের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী অনেক বিষয়ে তাঁর সম্মতি-অসম্মতি কিছুই স্পষ্ট ছিল না। তবে এমন অনেক বিষয়ও আছে, যা নিয়ে চেয়ারপারসনের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভালো বোঝাপড়া ছিল। সাময়িক হলেও এখন সে সুযোগ ফিরেছে। এখন বিএনপির চেষ্টা থাকবে সামনের দিনগুলোতে সতর্ক থেকে খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে মুক্ত করে রাজনীতিতে ফেরানো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই না তিনি এখন রাজনীতি নিয়ে কথা বলুন। আমরা চাই তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপর দেখা যাবে। রাজনীতি করার সময় তো পড়ে আছে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই।’