করোনা: সঠিকভাবে বুঝে পরিকল্পনা হয়নি

রশীদ ই মাহবুব।
রশীদ ই মাহবুব।

চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। আর বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর অর্থ, আমরা প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় পেয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি পর্বটা খুব বেশি ভালো হয়নি। সঠিকভাবে বুঝে পরিকল্পনা করা হয়নি। বাস্তবতার নিরিখে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, সেই রূপরেখা তৈরি করা হয়নি। তবে এখন আর দোষারোপে যাওয়ার সময় নেই।

এখন পর্যন্ত দেশে ৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, ৫ জন মারা গেছেন। কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) আছেন কয়েক হাজার মানুষ। সীমিত পরিসরে হলেও সামাজিক সংক্রমণ যখন শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তখনই কোয়ারেন্টিনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটা ছোঁয়াচে রোগ, তাই আইসোলেশনই (বিচ্ছিন্ন করা) হচ্ছে প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। শুরু থেকে এই বিচ্ছিন্নকরণের কাজটি যথাযথভাবে করা গেলে এমন পরিস্থিতি হতো না। এ জন্য জনগণও দায়ী, আবার রাষ্ট্রও সেভাবে প্রস্তুতি নেয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার মডেল হচ্ছে—পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। আমাদের সমস্যা হলো পরীক্ষা করার কিট ও পরীক্ষাগারের স্বল্পতা। বেশি বেশি পরীক্ষা করতে পারলে সুবিধা হতো। তখন আমরা একটা নিশ্চিত ধারণা পেতাম, আমাদের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আসলে কত। আমাদের পরীক্ষার সংখ্যার প্রতি ভরসা রাখতে না পেরে বিদেশিরা চলে যেতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে ৯২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে চিকিৎসার জায়গায়ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস সুবিধা বা ভেন্টিলেটর, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ যদি আমাদের বেশি লাগে, তা রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বই এটি এখনো করতে পারেনি। আবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও (পিপিই) স্বল্পতা আছে। তবে এটা ঠিক, সব চিকিৎসকের পিপিই প্রয়োজন নেই। বলা হচ্ছে, অনেক হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি এসব হাসপাতাল প্রস্তুত? তারা কি এখনই কাজ শুরু করতে পারবে? এ বিষয়গুলো সরকারের তদারক করা উচিত।

আমার মনে হয়, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ একটা জায়গায় পৌঁছাবে। সাম্প্রতিক সময়ে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন। মূল সমস্যা হলো, মার্চে যাঁরা দেশে ফিরেছেন তাঁদের নিয়ে। সংখ্যাটি প্রায় দুই লাখ। যদিও তাঁদের অনেককে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে।

দেশে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি দেওয়ার পর বাড়ি যেতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে কেউ আক্রান্ত নন, এমনটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আর ১৪–১৫ দিন পর বোঝা যাবে, এই বাড়ি যাওয়াটা কীভাবে ‘অ্যাফেক্টেড’ করেছে। কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন, তা পরীক্ষা না করে শতভাগ বলা যাবে না, কিন্তু বোঝা যাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মরদেহ কবরস্থ ও সৎকার। যেগুলো নিশ্চিত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা, সেগুলোর বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা আছে। কিন্তু যেগুলো সন্দেহভাজন, সেগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে? গ্রামীণ পর্যায়ে কীভাবে মরদেহ কবরস্থ ও সৎকার করা হবে?

রাষ্ট্র আমাদের বলছে, আমরা যাতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হই। কিন্তু আমার মনে হয়, রাষ্ট্র আতঙ্কিত হয়ে একেক সময় একেক রকম কথা বলছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয় যদি সচেতন হয়ে কাজ করে, তাহলে আমাদের লাভ হবে।

সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন