শরীয়তপুরে অধিকাংশ প্রবাসীর হদিস নেই, আতঙ্কে মানুষ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুরে গত দুই মাসে ৮ হাজার ৪৬৪ প্রবাসী এসেছেন। এর মধ্যে ৩৪০ ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। ৩০৪ ব্যক্তির হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। এর বাইরে যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরেছেন, তাঁদের খুঁজে পায়নি প্রশাসন। এতে এই জেলায় করনোভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১১ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৬৪ ব্যক্তি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত আরও পাঁচ হাজার ব্যক্তি ফিরেছেন। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে যাঁরা গেছেন, তাঁদের ছাড়া অন্যদের নিকটবর্তী থানা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেকেই সাড়া দেননি। বিপুলসংখ্যক বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় না আশায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

এ অবস্থায় মানুষকে সচেতন করতে ঘরে থাকতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানতে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি তরুণদের বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনীতিবিদেরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নানা সরঞ্জাম বিতরণ করছেন। আজ শনিবার থেকে নিম্ন আয়ের ও দুস্থ মানুষদের ১০ কেজি করে চাল ও ২০০ টাকা করে বিতরণ করছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের দেড় লাখ মানুষ বিদেশে থাকেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইতালিতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে নড়িয়ার বাসিন্দাই ৭০ শতাংশ। প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত শরীয়তপুরে যাতায়াত করছেন। প্রবাসে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও শরীয়তপুরে প্রবাসীরা আসছেন।

এ বিষয়ে নড়িয়ার ভোজেশ্বর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েক হাজার মানুষ বিদেশে থেকে ফিরে তথ্য গোপন করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে ঘরে বসে আছি। তাঁদের কারণে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ আজ আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। আমরা এমন কেন? যাঁরা প্রবাস থেকে এসেছেন, তাঁরা উন্নত দেশগুলোর নিয়ম–শৃঙ্খলা ঠিকমতো পালন করতেন। তবে কেন নিজের দেশে এসে এমন আচরণ করছেন?’

জাজিরা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মো. পলাশ খান বলেন, ‘বিদেশে থেকে ফিরে আসা কিছু মানুষের অসচেতনতাই আজ আমাদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিল। নিরুপায় হয়ে মাতৃভূমিকে নিরাপদ রাখতে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে ঘরে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি, সাধ্যমতো জীবাণুনাশক ও মাস্ক বিতরণ করছি।’

শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম অশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা ধরনের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা তিন দিন ধরে শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার, সড়ক ও নিত্যপণ্যবাহী যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন।

জেলা পুলিশ, শরীয়তপুর পৌরসভা, বেসরকারি সংস্থা এসডিএস, সামাজিক সংগঠন জয়ন্তী, জাজিরার করোনা প্রতিরোধ কমিটি বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন। মানুষের মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করছে।

এই বিষয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে মানুষকে নিরাপদে ঘরে থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তাহলেই আমরা করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পারব। আমার নির্বাচনী এলাকার কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের প্রত্যেকটা নাগরিককে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিম্ন আয়ের মানুষ ও দুস্থ কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা সবাইকে সরকারের নির্দেশ ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজেসহ দেশকে বাঁচানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’