'ঘরে বইসা থাকলে পেট চালাইবো কে?'

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে মানুষের চলাচল সীমিত করায় শহিদুল ইসলামের মতো শ্রমজীবী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে মানুষের চলাচল সীমিত করায় শহিদুল ইসলামের মতো শ্রমজীবী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। ছবি: প্রথম আলো

শহিদুল ইসলাম (৪৫) একজন কলা বিক্রেতা। দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লোকজনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শহিদুলের ঘরে বসে থাকলে পেট চলে না। আজ শনিবার কলা নিয়ে বের হয়েছিলেন। হাট-বাজারে লোকজন না থাকায় ঘুরে ঘুরে কলা বিক্রি করছেন মাত্র ১৮০ টাকার। এ থেকে লাভ হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা।

শুধু শহিদুল ইসলাম নন; রিকশাচালক, ইজিবাইক চালকসহ মাদারীপুর জেলার হাজারো শ্রমজীবী মানুষের একই অবস্থা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শহরে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। শহর বা গ্রাম কোথাও নেই মানুষের তেমন আনাগোনা। হাট-বাজারগুলোতে মানুষের সমাগম একদমই কমে গেছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁরা পাচ্ছেন না কোনো সরকারি সহযোগিতা।

শহিদুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামে। বাবা-মা, ৩ মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। রোজ ঝুঁড়ি মাথায় কলা নিয়ে শহরে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'দুই দিন ঘরে বইসা রইছি। আইজ আর পারলাম না। ঘরে বইসা থাকলে পেট চালাইবো কে? আমার শরীরে অনেক অসুখ, হাঁটতে কষ্ট হয়। তাও পেটের দায়ে বের হইতে হইছে। সেই কালিগঞ্জ থেকে আইছি। সারাদিন ঘুইরা ১৮০ টাহার কলা বেচছি, বাকি কলাডি দুই দিনের মধ্যে না বেচতে পারলে ৬০০ টাহার সব কলা নষ্ট হইবে। ঘরে চাউল-ডাইল কিছুই নাই। কেমনে বাঁচমু?'

খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা শিবচর উপজেলায়। ৯ দিন ধরে উপজেলাটি অবরুদ্ধ। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ সকালে পাঁচ্চর এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ভ্যানচালক এসকেন্দার আলী। তিনি বলেন, 'করোনার ভয়ে আর কত দিন ঘরে না খেয়ে কষ্ট করুম? ঘরে থাকলে সরকার তো আর ভাত দিবে না। তাই নিজেই রাস্তায় নামছি। দেখি কিছু আয় রোজগার করতে পারি কিনা?'

উৎরাইল এলাকার রিকশাচালক মো. শাহীন মিয়া বলেন, রিকশা চালিয়ে ১০০ টাকাও আয় হয়নি। অথচ গ্যারেজ ভাড়া দিতে হবে ২৫০ টাকা। গ্যারেজের টাকা দিতে না পারলে কাল থেকে মালিক আর রিকশা দেবে না। পাঁচজনের সংসারের খাওয়া–দাওয়া কীভাবে হবে, এটা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

কাবুল ব্যাপারী নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, 'এক সপ্তাহ ধইরা খুবই খারাপ অবস্থা। প্যাসেনজার নাই। খালি রিকশা লইয়া ঘুরতে হয়। দুই বেলা ডাইল ভাত খাইতে হইলে কিছু আয় তো লাগব। আর রিকশা না চাইলাতে পারলে সংসারে বাজার করার টেকা পামু কই?'

কলেজ মোড় এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইক চালক সেকেন্দার ঘরামী। যাত্রী ইজিবাইকে না ওঠার ব্যাপার তিনি বলেন, 'রাস্তাঘাটে মানুষই তো নাই। তিন দিন ধরে খুব কষ্টে আছি। রোজ ইজিবাইকের জন্য মালিককে ৪০০ টাকা দিতে হয়। দুপুর হইয়া আইলো ১০০ টাকাও হয়নি। ক্যামনে চলমু বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতাই আমরা পাইনি।'

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, 'দেশে এখন করোনাভাইরাসের দুর্যোগ চলছে। আমাদের সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী এসেছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। অসহায় মানুষসহ সবাই ঘরে থাকুন। ত্রাণ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে অসহায়দের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না।'