টেলিমেডিসিন সেবায় মুগদা হাসপাতাল

টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চার দিন ধরে এই সেবা দিচ্ছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি এই হাসপাতাল। ২৬ মার্চ থেকে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা এই সেবা নিতে পারবেন যেকোনো মানুষ।

গতকাল রোববার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঢাকাসহ দেশের মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২৬ মার্চ থেকে আমাদের হাসপাতাল টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছে। আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা যেকোনো মানুষ এই সেবা নিতে পারবেন।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪২৯ নম্বর কক্ষটি টেলিমেডিসিন কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের তিনটি স্মার্টফোন রয়েছে। এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

মুগদা টেলিমেডিসিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি কল পাচ্ছেন তাঁরা। বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাঁদের ফোন দিচ্ছেন। তবে সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ফোন আসছে। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁদের ফোন নম্বর, ঠিকানা হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতায় নিবন্ধিত করা হচ্ছে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রোকসানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়েছে। যাঁরা সর্দি, জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের আমরা টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে সেবা দিচ্ছি। জ্বর ছাড়াও অন্য রোগীরাও আমাদের ফোন করছেন। প্রতিদিন অনেক ফোনকল পাচ্ছি। জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আমরা ওষুধের নাম বলে দিচ্ছি, টেক্সটও করছি। আর যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা যদি খিলগাঁও, মুগদা এলাকার বাসিন্দা হন, তাঁদের ওষুধেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

টেলিমেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক রোকসানা আক্তার। ছবি: আসাদুজ্জামান
টেলিমেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক রোকসানা আক্তার। ছবি: আসাদুজ্জামান

টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে কীভাবে মানুষ সেবা পাচ্ছেন, সে ব্যাপারে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার সুশান্ত বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের টেলিমেডিসিন বিভাগে সব ধরনের রোগীই সেবা পাচ্ছেন। এই বিভাগ ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন সব সময়। রোগীর কাছ থেকে ফোন পাওয়ার পর আমরা প্রথমে নম্বরটা খাতায় লিপিবদ্ধ করি। এরপর আমরাই আবার ওই রোগীর মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিই। আমরা মনোযোগসহ রোগীর সব কথা শুনছি। তারপর ওই রোগীকে যে ওষুধ খেতে হবে, তা জানিয়ে দিচ্ছি। আর ওই রোগীর মোবাইল ফোনে টেক্সট করেও ওষুধের নাম লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

রোগীদের পরামর্শ দেওয়া প্রসঙ্গে টেলিমেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক রোকসানা আক্তার বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি শ্বাসকষ্ট বেশি হয়, তখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। যাঁরা সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের আমরা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। বয়স্ক ব্যক্তিদের একটা করে প্যারাসিটামল খাওয়ার কথা বলছি।’

টেলিমেডিসিনের পাশাপাশি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বহির্বিভাগেও চিকিৎসা পাচ্ছেন। হাসপাতালটির সামনে প্যান্ডেল বানানো হয়েছে। সেখানে রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে দুই রোগীর নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠিয়েছিল মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

মুগদা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: আসাদুজ্জামান
মুগদা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: আসাদুজ্জামান

হাসপাতালটির পরিচালক শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আমাদের হাসপাতাল থেকে দুজন রোগীর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। তবে কারও ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসেনি। দেশের এই ক্রান্তিকালে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’

চিকিৎসক শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তি আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের টেলিমেডিসিন বিভাগে ফোন দিন বা আমাদের হাসপাতালে আসুন। আমাদের হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকে ফিরে যেতে হয় না। সর্বোচ্চ সেবাটাই পাবেন। করেনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিয়মিত হাত পরিষ্কার করুন।’

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেলিমেডিসিন বিভাগের ফোন নম্বর: ০১৮৪৪৬৬৫৫৮৫, ০১৮৪৪৬৬৫৩৩৬, ০১৮৪৪৬৬৫৩৩৭।