অবশেষে করোনা পরীক্ষার অনুমতি পেল আইসিডিডিআরবি

সরকার শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশকে (আইসিডিডিআরবি) কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু কেন প্রতিষ্ঠানটিকে শুরু থেকে এ কাজে যুক্ত করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আইসিডিডিআরবি ডায়রিয়াজনিত রোগ নিয়ে গবেষণার জন্য সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। এর উদ্ভাবিত স্যালাইন বিশ্বের বহু মানুষের জীবন রক্ষা করে চলেছে। পুষ্টি, যক্ষ্মা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, কলেরার টিকা—এ রকম বহু বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত গবেষণা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিতভাবে বিশ্বের নামকরা জার্নালে প্রকাশ পায়। সরকারের অনেক কাজের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা জড়িত। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা পায়। স্বাস্থ্যসচিব এর নির্বাহী বোর্ডের সদস্য।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আইসিডিডিআরবিকে রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ১০০ কিট দেওয়া হচ্ছে।

রোগ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় আইসিডিডিআরবিকে আগেই যুক্ত করা দরকার ছিল বলে মনে করেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইসিডিডিআরবির পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। আমি জানি না, কেন এত দিন পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’ প্রবীণ এই ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন আইসিডিডিআরবির মতো অন্যরাও যেন সহজে নমুনা পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

জৈব নিরাপত্তা আছে এমন ল্যাবরেটরিতেই কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হতে হবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে ল্যাবরেটরির কর্মীদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেই নিরাপত্তা আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে আছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর মহাখালীতে। এর থেকে আধা কিলোমিটারের কম দূরত্বে আইসিডিডিআরবি। প্রস্তুত থাকলেও আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়নি সরকার। এক সপ্তাহ আগে শুধু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একাধিকবার বলেছে, সরকারি–বেসরকারি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোভিড–১৯ মোকাবিলা করতে হবে। যখন বেশিসংখ্যক পরীক্ষার কথা উঠেছে, তখন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, প্রয়োজনে অন্যের সহায়তা নেওয়া হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিট পায়নি। প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ বিভাগ বলেছে, ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিকল্পনায় আমাদের সম্পৃক্ত করায় আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এখন কাদের পরীক্ষা করব, কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হবে, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কী করব, সেসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

পাকিস্তান আমলে কলেরা বিষয়ে কাজ করার জন্য আইসিডিডিআরবি এবং ম্যালেরিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আইইডিসিআরের। তখন এদের ভিন্ন নাম ছিল। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির নিকট অতীতেও একসঙ্গে নানা বিষয়ে গবেষণা করেছে।