করোনার কারণে বেকার লাখো প্রবাসী কর্মী

প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। এঁদের একটি বড় অংশ কাজ করে চুক্তিভিত্তিক। ছবি: রয়টার্স
প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। এঁদের একটি বড় অংশ কাজ করে চুক্তিভিত্তিক। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় গোটা পৃথিবী। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। এই অবস্থায় বেকার হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ প্রবাসী। বেশি সংকটে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা। 

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র বলছে, প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। এঁদের একটি বড় অংশ কাজ করে চুক্তিভিত্তিক। এ ছাড়া কয়েক লাখ আছেন, যাঁদের বৈধ কাগজপত্র নেই। তাঁরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। এখন তাঁদের​ আয় পুরোপুরি বন্ধ। 

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী কাজ করেন। গত বছরও বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও ইতালি। সব কটি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সবাই গৃহবন্দী হয়ে আছেন। ছোট আকারের বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন। এসব দেশের প্রবাসীরা বলছেন, বাইরে সব কাজ বন্ধ। অল্প কিছু জমা টাকা দিয়ে দিন পার করছেন। সামনে বড় ধরনের সংকটে পড়ার শঙ্কায় আছেন প্রবাসীরা। 

বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সবার আগে প্রবাসীদের নিরাপদ থাকা জরুরি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে বায়রা। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আমরা সৌদি আরবপ্রবাসী বাংলাদেশি’ নামের ফেসবুক গ্রুপে সাদিকুর রহমান লিখেছেন, অবৈধ কর্মীদের জন্য কোনো কাজের সুযোগ আছে কি না। আরেক প্রবাসী মো. রাসেল লিখেছেন, তাঁরা দুজন কর্মী কোনো কাজ না পেয়ে বিপদে আছেন। সোহাগ নামের একজন লিখেছেন, তিন মাসের ভিসায় আড়াই মাস আগে সৌদি আরবে গেছেন। কোনো কাজ পাননি, তাই ভিসার মেয়াদ বাড়বে না। এখন দেশে ফেরার উপায় খুঁজছেন। মো. রাকিব মিয়া লেখেন, তিনিও কোনো কাজ পাচ্ছেন না। তবে সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মীদের জন্য নতুন একটি ঘোষণা দিয়েছে গত শনিবার। কর্মীরা চাইলে এখন আবেদন করে মালিক (কফিল) পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে একই প্রতিষ্ঠানের ২০ শতাংশের বেশি কর্মী এ সুযোগ নিতে পারবেন না। 

>প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে চুক্তি-ভিত্তিক কাজ করেন। আয় বন্ধ, করোনায় আক্রান্তের ভয় নিয়ে কাটছে সময়।

‘মালয়েশিয়াপ্রবাসী হেল্পলাইন’ নামের ফেসবুক গ্রুপে দেশটির এক প্রবাসী আরিফ খান লিখেছেন, ‘খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছি, একটি কাজ দরকার।’ এমন আরও অনেকেই কাজ চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন এ গ্রুপে। এর উত্তরে একাধিক প্রবাসী লিখেছেন, কোথাও কাজ নেই। 

কুয়েতে আড়াই লাখের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন, যার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় ব্যবসায়ী। ইতালিতে ১ লাখ ৪৫ হাজার বৈধ প্রবাসী আছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে আরও প্রায় ১ লাখ অবৈধভাবে আছেন, তাঁরা আতঙ্কে দিন পার করছেন। ইতালির বিভিন্ন শহরের সড়কে অন্তত ১ লাখ প্রবাসী ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করতেন। তাঁরা এখন ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না। 

ইতালিপ্রবাসী কমিউনিটি নেতা তুহিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বৈধ কর্মীরা সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা পাবেন। কিন্তু অবৈধ কর্মীরা ভয়ে লুকিয়ে আছেন। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে চিকিৎসা নিতেও ভয় পাচ্ছেন। 

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসীদের অর্ধেকের বেশি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তাঁরা আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোর উচিত, ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখা, যাতে পরবর্তী সময় তাঁদের নানাভাবে সহায়তা করা যায়। 

প্রবাসীদের পরিস্থিতি নজরদারির জন্য অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করেছে প্রবাসী মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বলছে, অনেক জায়গায় নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রবাসীরা সহায়তা পাচ্ছেন। যাঁরা নিয়মিত কর্মী নন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। দূতাবাস ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দিচ্ছে। 

মনিটরিং কমিটির ফোকাল পারসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশের সব মিশন ও শ্রম বিভাগ থেকে নিয়মিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের খাদ্য, আবাস, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।