শিবগঞ্জের সেই ব্যক্তির 'করোনা ছিল না'

স্ত্রীর রাতভর আকুতি। তবু কেউ এগিয়ে আসেননি। মৃত্যুর পর লাশ দাফনেও এলাকাবাসীর বাধা। শেষে পুলিশ মোতায়েন করে কবর দিতে হয়েছিল। এখন জানা যাচ্ছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সেই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। আজ সোমবার দুপুরে বগুড়ার সিভিল সার্জনকে এ তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আইইডিসিআর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, গত শনিবার শিবগঞ্জে জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিটির শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পরীক্ষায় মেলেনি। মৃত ব্যক্তি যেহেতু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না, তাই পরিবারের সদস্যদের আর কোয়ারেন্টিনে রাখা কিংবা প্রতিবেশীদের লকডাউনে রাখার দরকার নেই।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার নিজের কর্মস্থল গাজীপুর থেকে স্ত্রীর কর্মস্থল শিবগঞ্জে আসেন। এরপর জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে পড়েন। শুক্রবার রাতে অবস্থার অবনতি ঘটে। অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে নানা স্থানে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন স্ত্রী। করণীয় জানতে আইইডিসিআরের হটলাইনেও কল করেন তিনি। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। পাড়াপ্রতিবেশীও করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এগিয়ে আসেননি। শেষ পর্যন্ত বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে কল করলে পরদিন সকাল ১০টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসক এসে ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় দাফনেও বাধা দেন এলাকাবাসী। বাধার মুখে নিজ বাড়ি কাহালু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে খাস সম্পত্তিভুক্ত পীরের মাজারের পাশে ওই ব্যক্তিকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেখানে কবর খুঁড়তেও বাধা দেওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কবর খুঁড়তে স্থানীয় কেউ রাজি হননি। পরে পুলিশের সদস্যরাই কবর খোঁড়েন ও দাফনের ব্যবস্থা করেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পাশাপাশি আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, আইইডিসিআরের দেওয়া প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানের আর কোয়ারেন্টিন দরকার নেই। পাশাপাশি আশপাশের বাড়িগুলোর লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে।