দেশের ১২ কারখানায় তৈরি হচ্ছে সুরক্ষা পোশাক

কারখানাগুলোর মধ্যে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ১৭ হাজার পিপিই বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কারখানাগুলোর মধ্যে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ১৭ হাজার পিপিই বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা সুরক্ষা পোশাকের সংকটের কথা প্রতিদিনই আসছে। সেই সংকট কাটাতে দেশের রপ্তানিমুখী ১২টি পোশাক কারখানায় তৈরি হচ্ছে পিপিই। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে কারখানাগুলো কাজ করছে। 

কারখানাগুলোর মধ্যে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ১৭ হাজার পিপিই বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গত শনিবার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার করে পিপিই উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। ৫ এপ্রিল কারখানা পুরোদমে খুললে তাদের পিপিই উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে প্রতিদিন ৫-১০ হাজার পিস। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ হাজার পিপিইর মধ্যে ১৩ হাজার পিস আমরা বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিতরণ করব। বাকি ৪ হাজার পিপিই আমরা নিজেরাই হাসপাতালগুলোতে দেব। তারপর কোনো হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠান যদি ক্রয়াদেশ দেয়, তাহলে আমরা বিনা মুনাফায় পিপিই প্রস্তুত করে দেব।

জানা যায়, আজমি ফ্যাশন, অ্যালায়েন্স অ্যাপারেলস, জেএম ফেব্রিকস, লাক্সমা ইনওয়্যার, উর্মি গার্মেন্টস, স্নোটেক্স আউটারওয়্যার, টিআরজেড গার্মেন্টস, ফোরএ ইয়ার্ন অ্যান্ড ডায়িং, ডেকো ডিজাইন লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যারিস্টোক্র্যাট গ্রুপ ও মোহাম্মদী শার্টেক্স লিমিটেড পিপিই তৈরি করছে। তবে অনেক পোশাক কারখানা কাপড় দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। 

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিই বানাতে আমাদের পোশাকশিল্পের অনেক উদ্যোক্তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন। আশা করছি, আগামী ৩ এপ্রিল ১০ হাজার পিপিই প্রস্তুত হয়ে যাবে। সেটি আমরা সরকারের কাছে হস্তান্তর করব।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ৫০ হাজার পিপিই প্রস্তুত করব। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ পিপিই পিস। দেখা যাক, কতটুকু করতে পারি।’

করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উচ্চ মানের অর্থাৎ ৩ ও ৪ লেভেলের পিপিই প্রয়োজন হয়। বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে যেসব পিপিই হচ্ছে, সেগুলো লেভেল ১ মানের। এটি মূলত পানিরোধক ও প্রফেশনাল পিপিইর কাছাকাছি, এমনটাই জানিয়েছে বিজিএমইএ। 

এদিকে গতকাল ২৮০ পিস পিপিই সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধ ভান্ডারে দিয়েছে পে ইট ফরোয়ার্ড, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বুয়েট অ্যালামনাই, রোটারি ক্লাব ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট অধীনে কয়েকটি রোটারি ক্লাব, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন ও বিজিএমইএ। উদ্যোগটির সঙ্গে আছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মার্ক্স অ্যান্ড স্পেনসারের বাংলাদেশ প্রধান স্বপ্না ভৌমিক ও তাঁর দল। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান পে ইট ফরোয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাদল সৈয়দ ও নির্বাহী সভাপতি ওয়াহিদ হোসেন। তাঁরা জানান, তিনটি পোশাক কারখানায় পিপিই তৈরি হচ্ছে। পিপিই নমুনার মান উন্নয়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আজ সোমবার থেকে প্রতিদিন ১ হাজার পিস পিপিই প্রস্তুত হবে। আপাতত ৩০ হাজার পিপিই তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি ৫০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। 

জানা যায়, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বুয়েট অ্যালামনাই ও পে ইট ফরোয়ার্ড প্রথমে সম্মিলিতভাবে পিপিই বানানোর উদ্যোগ নেয়। পরে উদ্যোগটির সঙ্গে যুক্ত হয় রোটারি ক্লাব ঢাকা নর্থ ওয়েস্টের অধীনে কয়েকটি রোটারি ক্লাব এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিটি সংগঠনই পিপিইর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছে। তবে অনেক কারখানায় পোশাকটি বানানোর অনুরোধ করলেও কেউ রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি স্বপ্না ভৌমিককে অবহিত করলে সহযোগিতা করেন। সবশেষে যুক্ত হয়েছে বিজিএমইএ।