জ্বর-শ্বাসকষ্টে মৃত ব্যক্তির দাফনে বাধা দেওয়ায় আ.লীগ নেতাকে শোকজ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জ্বর–শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। ময়দানহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজবাউল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। তাঁকে তিন দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশে গতকাল সোমবার বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ মেজবাউল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক নিজে মেজবাউল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে নোটিশটি পৌঁছে দেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে জানানো হয়, মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। এর পরপরই দল থেকে দাফনে বাধাদানকারী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা বলেছেন, লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। মেজবাউলকে দল থেকে বহিস্কার করা হতে পারে।

শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এক ব্যক্তি জ্বর–শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এলাকাবাসী সন্দেহ করেন, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এলাকাবাসী লাশ দাফনে বাধা দেন। এ সময় ময়দানহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজবাউল এলাকাবাসীর পক্ষ নিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। মেজবাউল সরকারি দলের নেতা হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামীকাল বুধবার তাঁর জবাব পাওয়ার পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে খারাপ সময় চলছে। একজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে কিংবা অন্য কোনো কারণে মারা যাক; মানবিক ও ধর্মীয় কারণে সরকারি দলের নেতা হিসেবে লাশ দাফনে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা দরকার ছিল মেজবাউলের। উল্টো তাঁর কারণে লাশ দাফনে প্রশাসনকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তাঁর কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল নেবে না। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার শিবগঞ্জে জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর কোয়ারেন্টিনে রাখা কিংবা প্রতিবেশীদের লকডাউনে রাখার দরকার নেই।

ওই ব্যক্তির বাড়ি বগুড়ার কাহালু উপজেলায়। এক সপ্তাহ আগে তিনি নিজের কর্মস্থল গাজীপুর থেকে স্ত্রীর কর্মস্থল শিবগঞ্জে আসেন। পরের দিন থেকে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। গত শুক্রবার রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে রাতভর অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে নানা স্থানে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন স্ত্রী। আইইডিসিআরের হটলাইনে কল করেও কোনো সাড়া পাননি তিনি। জ্বরের রোগী শুনে প্রতিবেশীরাও এগিয়ে আসেননি। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসক গিয়ে ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।

খাসজমিভুক্ত স্থানীয় পীরের মাজারের পাশে ওই ব্যক্তিকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হলে আওয়ামী লীগ নেতা মেজাউলের নেতৃত্বে বাধা দেওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কবর খুঁড়তে স্থানীয় কেউ রাজি হননি। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা দাফনের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পাশাপাশি আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।