করোনাকালে কুকুরের জন্য ভালোবাসা

অভুক্ত কুকুরদের খাবার খাওয়াচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে। ছবি: প্রথম আলো, রাজশাহী
অভুক্ত কুকুরদের খাবার খাওয়াচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে। ছবি: প্রথম আলো, রাজশাহী

'মানুষ তো কোনো না কোনোভাবে খাবার সংগ্রহ করবে, কিন্তু কুকুর তো পারবে না।'—এই চিন্তা করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। সেই চিন্তা থেকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত তিন দিন ধরে শতাধিক কুকুরকে দুই বেলা খাবার দিচ্ছেন।

এই দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের প্রসেনজিৎ কুমার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের ২০১৬-১৭ সেশনের তানভীর ইসলাম। তাঁরা প্রতিদিন বেলা ১১টায় ও রাত সাড়ে ৮টায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে খাবার দেন। অনেকেই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। চাল, ডাল দিয়ে সহায়তা করছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন ক্যাম্পাসের সব খাবার দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। এর কয়েক দিন পর আশপাশের খাবার দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্যাম্পাসে থাকা শতাধিক কুকুরকে না খেয়ে থাকতে হয়।


প্রসেনজিৎ ও সাকী বলেন, ক্যাম্পাসের কুকুরগুলো না খেতে পেয়ে একেবারেই শীর্ণ হয়ে গেছে। এদের দেখে খুব খারাপ লাগছিল। তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের পকেটের টাকায় ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে খাওয়াবেন। তাঁরা এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন 'ক্যাম্পাস পোষাপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প'।

আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনের পাশে একটি বড় হাড়িতে খিচুড়ি রান্না করছিলেন তিন শিক্ষার্থী। তিনটি ইট দিয়ে চুলাটি বানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে পড়ে থাকা বাঁশের টুকরো, কাঠের খণ্ড, গাছগাছালির ডালপালা-পাতা দিয়ে হাড়িতে জ্বাল দিচ্ছিলেন তাঁরা। ৬ কেজি চাল ও ২ কেজি ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেন। রান্না শেষ হতে না হতেই কয়েকটি কুকুর ভিড় জমায়। সাকী সেখানেই দুটো কুকুরকে খাবার তুলে দিলেন। পরে একটি বালতিতে করে খাবার নিয়ে গেলেন ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পানির ট্যাংকের পাশে ১০-১২টি কুকুর যেন আগে থেকেই খাবারের অপেক্ষায় ছিল। প্রসেজিৎ 'আয়, আয়' বলে ডাক দিতেই সবাই কাছে এল। ক্যাম্পাসে কুড়িয়ে পাওয়া ১০টি ওয়ানটাইম প্লেটে তাদের খাবার তুলে দেওয়া হয়। তারপর তাঁরা আরও কয়েকটি জায়গায় খাবার দিতে যান।


প্রসেনজিৎ বলেন, কেউ নগদ অর্থ দিলে তাঁরা নিচ্ছেন না। কেউ যদি চাল, ডাল কিনে দেন, তাহলেই তাঁরা নিচ্ছেন। তাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক দরকার। কেউ যদি তাদের সঙ্গে এসে কাজ করেন, তাঁরা তাদের সাদরে গ্রহণ করবেন। তাঁরা সহযোগিতা পেলে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজশাহী শহরের কুকুরগুলোকেও খাওয়াবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন পুরো লকডাউনই বলা চলে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অপচয় কমিয়ে দিয়েছে। খাবার হোটেলগুলোও বন্ধ। তাই পশু-পাখির খাবার কমে গেছে। তাদের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।