শিশুকে রাখতে হবে আনন্দময় পরিবেশে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। দমবন্ধ এ পরিস্থিতিতে শিশুদের ওপর যাতে মানসিক চাপ না পড়ে, সে জন্য বাড়ির পরিবেশটি আনন্দময় করে তাদের সক্রিয় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। আর এই কাজ মা–বাবা ও অভিভাবকদেরই করতে হবে।

এদিকে মাধ্যমিকের পর প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরও টিভি এবং অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাসের কারণে প্রাক্‌–প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ বন্ধের মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এই ছুটির মেয়াদও আগামী রমজানের ছুটি পর্যন্ত বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো। আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে। এর বাইরে স্কুলে যায়নি এমন শিশুও অনেক।

বয়স বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের এভাবে ঘরবন্দী হয়ে থাকাটা তাদের সহজাত অভ্যাসের বিপরীত চিত্র। এই সময়ে পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি শিশুরা কীভাবে সময় কাটাবে, সে জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আফরোজা হোসেন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সময়টিতে বাড়িতেও শিশুকে সক্রিয় রাখতে হবে। যেহেতু মা–বাবা বা অন্য অভিভাবকেরাও এই সময়ে বাসায় বা বাড়িতে আছেন, সুতরাং এই পরিবেশ তাঁরাই তৈরি করবেন। মা–বাবার মানসিক চাপ যেন শিশুদের ওপর না পড়ে, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। ছবি আঁকা, গল্পের বই পড়াসহ শিশুরা যে কাজটি করতে ভালোবাসে, সেটি করতে দিলে শিশুরা ভালো থাকবে। শিশুর হাতে মোবাইল ফোন না দিয়ে কিছু কাজ মা–বাবা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে করতে পারেন এবং সন্তানকে সেই কাজের বারবার স্বীকৃতি দিতে পারেন। এর মাধ্যমে কোনো কাজই যে ছোট নয়, সেটি উপলব্ধি করতে সহায়তা করা যায়। শিশুদের ‘কোয়ালিটি টাইম’ দিতে হবে। অর্থাৎ আনন্দময় ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করলে শিশুরা ভালো থাকবে।

প্রাথমিকের ক্লাসও টিভি ও অনলাইনে
মাধ্যমিকের পর এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ জন্য প্রস্তুতি চলছে। তবে কবে থেকে এই প্রক্রিয়ায় ক্লাস শুরু হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এখন কনটেন্ট তৈরির কাজ চলছে। তিন-চার দিন পর জানানো যাবে কবে থেকে এই প্রক্রিয়ায় পাঠদান শুরু করা হবে। তিনি বলেন, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক ব্যবস্থা থাকবে। শুধু সংসদ টিভি নয়, তাঁরা চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমেও যাতে তা প্রচার করা যায়। এ ছাড়া স্থায়ী একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হবে, যেখানে ক্লাসগুলো দেওয়া থাকবে। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত রোববার থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচার শুরু হয়েছে। কিছু সমস্যা থাকলেও সবাই একে ইতিবাচক বলছেন। অন্তত শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই কিছুটা হলেও ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে।

পাঠদানকারী শিক্ষকেরা ক্লাস শেষে বাড়ির কাজ দেবেন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করবে। এরপর স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষকদের কাছে জমা দিতে হবে, যা ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বার্ষিক পরীক্ষায় যোগ হবে।