বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের সামনে। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের সামনে। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ২ হাজার ৭০০ শ্রমিকের সাত সপ্তাহের বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করা হয়েছে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে শ্রমিকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং অগ্নিসংযোগ করেন। মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকেরা। তাঁরা এ সময় বকেয়া বিল চাওয়ায় শ্রমিকদের নির্যাতন এবং চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানান।

অবরোধ চলাকালে দাউদকান্দি উপজেলার বলদাখাল থেকে পেন্নাই এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে ব্যবসায়ী, সাধারণ যাত্রী ও রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান, দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছে সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের মাঠে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে থানার ওসি সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম কেরামত আলী, সুন্দলপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ আলম, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের জি এম আয়ুব আলী তালুকদার, জিএম জহিরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক শামীম হোসেন প্রমুখ।

সভায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহববুর রহমান মুঠোফোনে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেন এবং চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর সন্ধ্যা সাতটা থেকে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

শ্রমিকেরা জানান, ওই পাটকল কর্তৃপক্ষ দুই বছর ধরে ছয় থেকে আট সপ্তাহের বেতন আটকে রেখেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অনেকে বকেয়া বেতনের আশা ছেড়ে দিয়েই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। পেটের দায়ে চাকরির মায়ায় অনেকে বকেয়া টাকা চাইতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। কথায় কথায় পুরুষ সর্দারেরা নারী শ্রমিকদের নির্যাতন করছেন। এর প্রতিবাদে এবং বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা একটা থেকে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় দফায় দফায় সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কার্যালয়ে শ্রমিকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে বেড়ান। পরে বেলা তিনটা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী ও চালকেরা। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের এসআই সফর উদ্দিন একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।

জয়পুরহাট সদরের বটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জুতার কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, দাউদকান্দির চাঁদগাও গ্রামের শ্রমিক সুমী আক্তারসহ একাধিক শ্রমিক জানান, মালিক পক্ষ দুই বছর ধরে ছয় থেকে আট সপ্তাহের বেতন আটকে রেখেছে। বেতন না পেয়ে শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আবার পেটের দায়ে অনেকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও চাকরি করছেন। বকেয়া বেতন চাইতে গেলে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। অনেকে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন।

২৫ মার্চও শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তখন খবর পেয়ে দাউদকান্দির ইউএনও কামরুল ইসলাম খান ও মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছে মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গত রবি ও সোমবার সব শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে এলাকার মাস্তান বসিয়ে একাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই, অন্য শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার শ্রমিকেরা আন্দোলন, ভাঙচুর ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।

শ্রমিকেরা জানান, বুধবার বেলা তিনটায় মেকানিক্যাল প্রকৌশলী শামীম আহমেদ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের পক্ষে কথা বললে তাঁকে মালিক পক্ষ দুই দিন আটকে রেখে বেদম প্রহার করে চাকরিচ্যুত করে।

শ্রমিকদের মধ্যে তিতাস উপজেলার চান্দনাগেরচর গ্রামের লাকী আক্তার বলেন, ‘পুরুষ সর্দার এবং ম্যানেজার মিজান শিকদারের হাতে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহববুর রহমান বলেন, ‘বিদেশের চেক ভাঙাতে দেরি হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন দিতে দেরি হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই ও নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে চলে আসছে। হঠাৎ এত ঘটনা এটি বাইরের ইন্ধনও হতে পারে।’