শরীয়তপুরে আইসোলেশনে মৃত যুবকের দাফন বিশেষ নিয়মে, স্থানীয়দের বাধা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুরে আইসোলেশনে ভর্তি হওয়ার তিন ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক যুবক মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে আজ বুধবার ওই ব্যক্তির লাশ দাফনের কাজে স্থানীয়রা বাধা দেন। তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। মৃতের বাড়ি ও আশপাশের পাঁচটি বাড়ির ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৩৫ বছর বয়সী ওই যুবক বালু উত্তোলন খননযন্ত্রের শ্রমিক। তাঁর বাড়ি নড়িয়া উপজেলায়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথা থাকায় তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রাত সোয়া নয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ বেলা ১১টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরা সুরক্ষা পোশাক পরে সদর হাসপাতাল থেকে ওই মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই যুবকের লাশ নড়িয়ায় তাঁর গ্রামে নিয়ে গেলে দাফন কাজে বাধা দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজ উদ্দিন পুলিশ নিয়ে কবরস্থানে যান।

ওসি হাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকের মৃত্যু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তারপরও লাশ দাফন করতে বাধা দেওয়া দুঃখজনক। সব বাধা উপেক্ষা করে এখানেই ওই যুবকের দাফন হবে বলে জানান তিনি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনির আহমেদ খান বলেন, ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। যেহেতু তাঁর শ্বাসকষ্ট ছিল এবং তিনি প্রবাসী–অধ্যুষিত নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা; তাই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হয়। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী লাশ দাফন করার নির্দেশ দেন। আর মাদারীপুর জেলা হাসপাতাল থেকে সরঞ্জাম এনে মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকের বাড়ি ও আশপাশের চারটি বাড়ির বাসিন্দারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তাদের দেখভাল করতে বলা হয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে। কোয়ারেন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর কাছে খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রশাসন সরবরাহ করবে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলার ওই ব্যক্তি ১৯ মার্চ কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষায় তাঁর যক্ষ্মা ধরা পড়ে। তাঁকে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২৩ মার্চ তিনি সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান। গতকাল দুপুর থেকে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন স্বজনেরা। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তখন ওই ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে ভর্তি রাখেন।