করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের প্রয়োগ চায় টিআইবি

করোনা মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমে অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তার কঠোর ও নির্মোহ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, ‘এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় সফল হতে হলে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও কার্যকর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।’ টিআইবি বলছে, এই ঘোষণার বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব এখন সব পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী-সুবিধাভোগী, প্রশাসন, পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। অন্যদিকে জরুরি প্রয়োজনে ত্বরান্বিত করার বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও ক্রয় খাতে জবাবদিহি এবং খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে গতিশীলতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।


টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় অবস্থান যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি এর কার্যকর বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাঁর দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সুবিধাভোগীর ওপর। তাঁদের প্রতি এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা, এই ঘোষণার প্রতি তাঁরা শুধু শ্রদ্ধাশীল থাকবেন তা-ই নয়, বরং এই মহাদুর্যোগের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে থেকে তাঁরা সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি, আত্মসাৎ, অপচয় এবং রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের অপচর্চাকে সক্রিয়ভাবে প্রতিহত করবেন।’

মাদারীপুরের শিবচর, হবিগঞ্জের বাহুবল ও ভোলায় সরকারি সহায়তার চাল ও ভোজ্যতেল নিয়ে অনিয়মের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এসব উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জড়িতরা শাসক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ও পুলিশ সদস্য যেভাবে কঠোর অবস্থান নিতে পেরেছেন, তাতে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু এর ঠিক বিপরীতে অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে “দোকান খোলা রাখার” অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার নাম করে ক্যাশবাক্স থেকে টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। আমরা সীতাকুণ্ডের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবেই দেখতে চাই এবং আশা করতে চাই, শিবচর, ভোলা ও বাহুবলের দৃষ্টান্ত সকল প্রশাসনিক ও সেনাসদস্যসহ আইন প্রয়োগে নিয়োজিতদের জন্য মডেল হবে। কোনো ব্যত্যয় হলে সরকার ও প্রশাসন পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে কঠোরভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবেন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘বাংলাদেশে সুশাসনের ঘাটতি এবং বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগে নিয়োজিত সংস্থার দুর্নীতি-প্রবণতা সর্বজনবিদিত। অন্যদিকে বর্তমান প্রেক্ষিতে এই সংস্থাসমূহের হাতে বর্ধিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার পাশাপাশি বর্ধিত সম্পদ অর্পিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যাঁরা দুর্নীতিপ্রবণ, তাঁরা এই দুর্যোগের সময় আরও বেশি অনৈতিকতায় নিমজ্জিত হবেন, এই ঝুঁকি বিবেচনায় সরকারের উচিত হবে করোনা সংকট মোকাবিলায় গৃহীত সব কার্যক্রমের বাস্তবায়নের মূলধারায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণকে শীর্ষ প্রাধান্য দেওয়া।’

খাদ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পচনশীল সামগ্রীর সরবরাহ-চেইন সচল রাখতে পুলিশ এবং প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সীমিত পরিসরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে হবে। অন্যথায় ভোক্তাদের এ ধরনের পণ্যের সংকটের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষিনির্ভর জনগণের দুর্ভোগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে।