রাতে জমজমাট বাজার, সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই

রাতে মাছ ও সবজি কিনতে বাজারে ক্রেতার ভিড়। মদিনামার্কেট, সিলেট নগর, ১ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো।
রাতে মাছ ও সবজি কিনতে বাজারে ক্রেতার ভিড়। মদিনামার্কেট, সিলেট নগর, ১ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো।

‘ভাই, ভালা মাছ আছে। হাওরের টাটকা মাছ। লউকা (নেন)।’ বিক্রেতাদের এমন হাঁকডাকে ক্রেতারা কাছে এসে দরদাম করছেন। মাছ বাজারের পাশেই সবজি বাজার। সেখানেও একই দৃশ্য। শত মানুষ জটলা বেঁধে মাছ-সবজি কিনছেন। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা, বরং ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে যেন জমজমাট চারপাশ। এ চিত্র গতকাল বুধবার রাত সাড়ে নয়টায়, সিলেট নগরের মদিনামার্কেট এলাকায়।

সরেজমিনে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দেখা গেছে, মদিনামার্কেট এলাকায় আছেন শতাধিক মাছ ও সবজি ব্যবসায়ী। আরও ১০০টির বেশি রয়েছে মুদি, ফল ও ওষুধসহ অন্যান্য দোকানপাট। প্রতিটি দোকান ঘিরে মানুষের ভিড়। কোথাও কম, কোথাও বেশি ক্রেতা। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। কিন্তু এই বাজারে তার কোনো বালাই নেই। একে অপরের সঙ্গে শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছিলেন ক্রেতারা। কোনো কোনো ক্রেতাকে অবশ্য নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।

পুঁই, ডাঁটা ও নালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করছিলেন মাস্ক পরা মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। তিনি জানান, সবজি বাজার সকাল থেকেই শুরু হয়। তবে মাছের বাজার শুরু হয় বেলা চারটার পর থেকে। দিনের বেলা ক্রেতারা বাজারে এলেও সন্ধ্যার পর থেকেই মূলত ভিড় বাড়ে। অন্য সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কম হলেও সেটা খুব বেশি যে কম, তা নয়। আগের তুলনায় তাঁর শাক এখন ২০ ভাগের মতো কম বিক্রি হয়।

বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মানবেন্দ্র দাশ (৩৭) বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার মানুষজনদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন। এটি মেনে আমি এত দিন বাসার বাইরে বের হয়নি। আজ (গতকাল) বেরিয়েছি। আসার পথে রাস্তাঘাট ফাঁকা পেয়েছি। হাঁটতে হাঁটতেই মদিনামার্কেট এসেছি। এখানে এসে তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ! আগেই মতোই দেখি বাজারে ভিড়বাট্টা। তাহলে মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন কই? ভয় নিয়ে প্রয়োজনীয় সবজি ও মাছ কিনে নিচ্ছি। কার সঙ্গে কখন শরীর লেগে যায়, সেই আতঙ্কে আছি।’

শোল, বড় বাইন, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন জাতের তরতাজা মাছ বিক্রি করছিলেন মইনুল ইসলাম। তাঁর মতে, মানুষজন বাজারে আসছেন ঠিকই। তবে মাছের চেয়ে সবজিই বেশি কিনছেন তাঁরা। আগে যেখানে তিনি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতেন, এখন তাঁর বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২০ হাজার টাকার। ভয় আর আতঙ্কে অনেকে বাজারে আসছেন না। মইনুলের ধারণা, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রাত নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গড়ে মাত্র কয়েক শ মানুষ মাছ কিনতে আসছেন।

একাধিক সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মদিনামার্কেট এলাকায় আশপাশের আখালিয়া, পনিটুলা, পাঠানটুলা, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়া, নোয়াপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন, করেরপাড়াসহ অন্তত ২৫টি এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা নিয়মিত বাজার করতে আসেন। ১৭ মার্চের পর টানা কয়েক দিন করোনা-আতঙ্কে বাজারে মানুষজনের উপস্থিতি কম ছিল। গত কয়েক দিন ধরে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। আগের মতো না হলেও অন্তত ৬৫ শতাংশ ক্রেতারা এখন নিয়মিতই বাজার করতে আসছেন।

দিনের বেলা বিশেষ করে সবজি বাজার জমজমাট থাকে। আর সন্ধ্যার পর থেকে মাছ, সবজি ও মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি থাকে। সবজি ও মাছের বাজারের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্য যে রাস্তাটি গেছে, সেটি সরু ও অপ্রশস্ত হওয়ায় ঠেলাঠেলি করেই ক্রেতাদের পথ চলতে হয়। তবে বিক্রেতারা মোটামুটি নির্দিষ্ট দূরত্ব নিয়েই নিজেদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

গতকাল রাত সোয়া নয়টার দিকে পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা জাবেদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। এই ক্রেতা বলেন, নগরের পাশের সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকা সবজির জন্য বহুল পরিচিত। ওই এলাকা থেকে কিছু সবজি ব্যবসায়ী মদিনামার্কেটে প্রতিদিন তরতাজা সবজি বিক্রি করতে আসেন। মূলত তাজা তরিতরকারি কিনতেই সন্ধ্যার পর ক্রেতারা এখানে ভিড় করেন। তিনিও একই কারণে এসেছেন। তবে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেই কেনাকাটা করছেন। তুলনামূলকভাবে ক্রেতাদের ভিড় একটু বেশি থাকায় কেনাকাটায় আসলেই অস্বস্তিবোধ করছেন।