শ্রীপুরে কিশোরদের ঘরে রাখতে ব্যাট-বল জমা, হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো বই
গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা। গাজীপুরের শ্রীপুরের চকপাড়া গ্রামের একটি মাঠে ক্রিকেট খেলছিল কিশোরেরা। হঠাৎ সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে সবাইকে বই উপহার দিয়ে ঘরে থাকতে বললেন।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আজিজুল হক বলেন, মাঠে খেলাধুলা চলছিল। হঠাৎ পাশেই থেমে গেল পুলিশের জিপ গাড়ি। কিশোরেরা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে এলেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. আল মামুন (গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেল)। তিনি কিশোরদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দিলেন বই। আর সবাইকে বললেন, আর কিছুদিন ঘরে থাকতে। এ সময় তিনি কিশোরদের ব্যাট, বল ও স্ট্যাম্প স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে আপৎকালীন সময়ের জন্য জমা রাখেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় শেষ হলে কিশোরদের আবার এগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
আজিজুল হক বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার কিশোরদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর বিভিন্ন কৌশল বুঝিয়ে বলেন। তিনি কিশোরদের বলেন, ‘এখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় টেলিভিশনে পাঠদান করা হচ্ছে। তোমরা টেলিভিশনের পাঠদানে অংশ নাও। আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে তোমরা আগের মতোই খেলাধুলা করবে। আপাতত এই বই উপহার নিয়ে বাড়ি যাও।’ কিশোরেরা একজন অপরিচিত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বই উপহার পেয়ে খুব খুশি। ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন মাঠের আশপাশের লোকজনও।
চকপাড়া মেডিকেল মোড় এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সন্ধ্যায় এ বিষয়টি মেডিকেল মোড় এলাকার কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি। কারও কাছ থেকে এভাবে হঠাৎ বই উপহার পাওয়া ওই কিশোরদের কাছে একদমই নতুন। গ্রাম এলাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে বই পাওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট আলোচিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু কিশোরেরা অনেক সময় বিকেল হলেই একসঙ্গে খেলাধুলায় মেতে ওঠে। এটা তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বই দিয়ে কিশোরদের ঘরে ফেরানোর কৌশলটি সত্যিই চমৎকার।’
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজে বের হলেই বিভিন্ন স্থানে কিশোরদের খেলাধুলা করতে দেখি। অথচ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু কিশোরদের ওপর বল প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। চিন্তা করে দেখলাম তাদের বই উপহার দিয়ে বাড়িতে পাঠানো যায় কি না। তার সংগ্রহে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বিভিন্ন লেখকের দুই শতাধিক বই আছে। তিনি বইগুলো গাড়িতে রেখে দেন। যেখানেই কিশোরদের খেলতে দেখেন, সেখানেই তিনি তাদের বই উপহার দিয়ে বাড়িতে পাঠান। গতকাল কাজে যাওয়ার সময় সড়কের পাশেই ওই কিশোর দলকে খেলতে দেখে তিনি তাদের বই উপহার দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলেন। এ সময় তাদের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামগুলো স্থানীয়দের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখেন। কিশোরেরা কোমল মনের মানুষ। তাদের বল প্রয়োগ করে নয়, সুকৌশলে ঘরে রাখতে হবে। তারা বই পড়বে, ঘরে বসে দূরশিক্ষণে অংশ নেবে। এভাবে তাদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।