করোনা নিয়ে কল ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষের

সরকারি উদ্যোগে করোনার লক্ষণ জানতে যে কল করা হয়েছিল, তাতে সাড়া দিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে এসব কল আসে। ব্যবহারকারীরা তাঁদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান।

করোনা নিয়ে একটি ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির জন্য সরকার এ উদ্যোগ নেয়। এর সঙ্গে সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বা এটুআই প্রকল্প, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মোবাইল অপারেটরদের সংযুক্ত করা হয়েছে।

সবার আগে এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটর রবি একটি শক্তিশালী ডাটা অ্যানালিটিকস সিস্টেম গঠন করেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর বলে দাবি তাদের। রবি বলছে, এসব তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

আজ বৃহস্পতিবার এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে যোগ দেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর অনীর চৌধুরী, রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

এতে বিপুলসংখ্যক কল আসার বিষয়টি জানান অনীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ১০ দিনে করোনার বিষয়ে জানাতে ৩৩৩ নম্বরে ৪ লাখ, ১৬২৬৩ নম্বরে ১ লাখ ৭০ হাজার কল আসে। কল করে মানুষ শুধু দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন। তাঁদের কাছ থেকে আরও তথ্য পেতে *৩৩৩২# ডায়াল করে বয়স, শ্বাসকষ্ট আছে কি না, সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত মনে হয়েছে এমন কারও কাছে গিয়েছেন কি না ইত্যাদি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এতে সাড়া পাওয়া যায় ৭ লাখ মানুষের।

অনীর চৌধুরী বলেন, ‘সব মিলিয়ে দেখা গেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ইউনিক কল এসেছে। এখন আমরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করছি। যেসব এলাকায় রোগের লক্ষণ বেশি, সেখানে পরীক্ষা করা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, অনেকে দুষ্টুমি করেও কল করছে। পরে চিকিৎসক ফোন করলে অস্বীকার করছেন। এ রকম হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না।

রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, রবি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরির জন্য কাজ করছে, যেখানে গ্রাহকেরা জানতে পারবেন কোন কোন এলাকায় যাওয়া ঝুঁকির। উপাত্ত সংগ্রহের পর এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি তৈরি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, করোনা ঝুঁকির একটি ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি হলে সরকারও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ আরও জানান, রবি করোনা আক্রান্তদের এক মাসের ইন্টারনেট ও কথা বলার সুযোগ দেবে বিনা মূল্যে। এ ছাড়া শিক্ষা যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য অনলাইনে রবির টেন মিনিট স্কুলে বিনা খরচে প্রবেশ ও ২৫ টাকায় দুই গিগাবাইট ইন্টারনেট দেওয়ার কথা জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি বিভাগে করোনা পরীক্ষার পরীক্ষাগার প্রস্তুত হবে। এপ্রিলের মধ্যে মোট ২৮টি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, আজই ৫০০ থেকে ১ হাজার নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি কী, তা জানা যাবে এবং মানুষ আশ্বস্ত হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে। সিঙ্গাপুর মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করোনা ঝুঁকির স্থান চিহ্নিত করে দিচ্ছে। সাঙ্গাপুর ব্লু টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে করোনা সংক্রমিতদের চিহ্নিত করছে। হংকং ট্র্যাকিং রিস্টব্যান্ডের মাধ্যমে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করছে। সিঙ্গাপুর ডেটা অ্যানালিটিকসের মাধ্যমে কোথায় সংক্রমিত হচ্ছে, যা নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছে।

সাহেদ আলম আরও বলেন, প্রযুক্তির সাহায্যে বাংলাদেশেও কোন এলাকায় সন্দেহজনক করোনা-আক্রান্ত বেশি, তার একটা মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এটার সঠিকতা ৯৫ শতাংশের মতো। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পরও ঝুঁকি থেকে যায়। তখন সরকার এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে রবির চিফ ইনফরমেশন অফিসার আসিফ নাইমুর রশিদ দেখান ডাটা অ্যানালিটিকস সল্যুশনটি কীভাবে কাজ করে এবং করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার এই তথ্য কীভাবে কাজে লাগাতে পারে।