দেশে দেশে করোনাভাইরাসের ভিন্ন আচরণ

চীনে করোনাভাইরাস দ্রুত তা বিস্তার লাভ করলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর বিস্তার ঘটছে দ্রুত। ছবি: রয়টার্স
চীনে করোনাভাইরাস দ্রুত তা বিস্তার লাভ করলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর বিস্তার ঘটছে দ্রুত। ছবি: রয়টার্স

ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পর বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে দ্রুত তা বিস্তার লাভ করলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর বিস্তার ঘটছে দ্রুত। সেই দেশগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধি ও মৃত্যুর প্রবণতার সঙ্গে এশিয়াসহ অনেক অঞ্চলের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিসহ খ্যাতনামা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা গবেষণা ও বিশ্লেষণে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির সব প্রদেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর অন্যতম ইতালি। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির শেষে ইতালিতে সংক্রমণ শুরুর পর ৫৯ দিনে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ দিনে দেড় লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালি ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে আক্রান্ত অন্য দেশগুলো যেমন স্পেন, ইরান, যুক্তরাজ্য প্রায় সব দেশেই ভাইরাসটি সংক্রমণের হার ক্রমেই বেড়েছে।

তবে বাংলাদেশে প্রথম আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিটির সূত্র ছিল ইতালি। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক হলেও ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশে একই রকম আচরণ করছে না করোনাভাইরাস।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম গতকাল বিবিসিকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ডেটা অন্যদের সঙ্গে মেলে না কেন, সেটা নিয়ে আমিও চিন্তা করছি। আমাদের এখানে ভাইরাসটি ইতালি থেকে এসেছে। সেটি ইতালিতে হ্যাভক তৈরি করল আর আমাদের এখানে কিছুই করছে না, এ রকম একটা ব্যাপার। বিষয়টা আমিও বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশে প্রথম যে রোগী শনাক্ত হলো ৮ মার্চ, এরপর প্রথম ইনকিউবেশন পিরিয়ড (লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কাল) ১৪ দিন। দুটি ইনকিউবেশন পিরিয়ড শেষ হবে ৫ এপ্রিল। এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। ৫ এপ্রিলের পর সম্ভবত আমরা বলতে পারব, বাংলাদেশে ধরনটা কী রকম।’

বিসিজি টিকা বাধ্যতামূলক দেশগুলোতে মৃত্যু কম
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, যে দেশগুলোতে টিবির টিকা বাধ্যতামূলক, সেখানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক কম। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানবিষয়ক অপ্রকাশিত গবেষণাগুলোর অনলাইন আর্কাইভ মেডআর১৪–এ প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। যদিও সর্বশেষ ওই গবেষণার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি।

গবেষণাটি নিয়ে ব্লুমবার্গের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার কম হওয়ায় একদল গবেষক বিসিজির টিকার সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক গঞ্জালো ওতাজু।

চীনের পর জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও দেশটি লকডাউন করেনি। শুধু যক্ষ্মা নয়, অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধেও যে বিসিজির টিকা সুরক্ষা দেয়, এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে গঞ্জালু ওতাজু এবং তাঁর সহকর্মীরা যেসব দেশে সবর্জনীন বিসিজির টিকার ব্যবস্থা রয়েছে, তার তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ শুরু করেন। গবেষকেরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যুর সঙ্গে বিসিজির টিকার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে শুধু বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে বিসিজির টিকা দেওয়া হয়। আর জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে কয়েক যুগ আগেই বিসিজির টিকার প্রয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। চীনে ১৯৭৬ সালের আগে এর ব্যবহার সেভাবে মেনে চলা হতো না। আর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সর্বজনীন বিসিজির টিকার ব্যবস্থা মেনে চলে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক—এই ছয় দেশে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্কদের বিসিজির টিকা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে, করোনাভাইরাস তাদের কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে।