রোহিঙ্গা শিবিরে সাহায্য সংস্থার কার্যক্রম সীমিত

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সরকার সাহায্য সংস্থার কর্মকাণ্ড সীমিত করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মকাণ্ড সীমিত করার পর আজ শুক্রবার কক্সবাজারে আরেক দফা বৈঠকের পর তা আরও সীমিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সীমিত আকারে কার্যক্রম কত দিন পর্যন্ত চলবে সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের সূত্রগুলো বিকেলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরগুলোতে চিকিৎসা সহায়তা, পুষ্টি, সুরক্ষা, জরুরি খাবার ও পানীয় এবং পয়োনিষ্কাশনের মতো বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সরকার সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে লোকজনের চলাফেরা সীমিত করলেও কক্সবাজারে এর বাস্তবায়ন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারে বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিবিরকে ঘিরে চলাফেরা আরও সীমিত করতে ঢাকা থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারে কর্মরত প্রত্যেকটি দেশি-বিদেশি সংস্থাকে তাদের জনবলের তালিকা ও গাড়ির তালিকা আরআরআরসির কার্যালয়ে শনিবারের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ওই তালিকায় থাকা লোকজন ও গাড়ি যাচ্ছে কীনা সেটা রোববার থেকে মিলিয়ে দেখা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার থেকে এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, এ মুহূর্তে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করার জন্য দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিবন্ধিত রয়েছে আরআরআরসি কার্যালয়ে। অর্থাৎ সাহায্য সংস্থার ওই ২০ হাজার কর্মীর পরিচয়পত্র রয়েছে। কক্সবাজারে এক বৈঠকে আইএসসিজি জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ হাজার কর্মী কাজ করবে। এদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার ৮শ’ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মী।

রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব ও রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সভাপতি মাসুদ বিন মোমেন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, টাস্ক ফোর্সের সবশেষ বৈঠকে করোনাভাইরস সংক্রমণের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। এ জন্য শিবিরে স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নতুন ওই ভাইরাসটির দ্রুত বিস্তারের কারণে লোকজনের চলাচল সীমিত করা, একেবারেই জরুরি নয় এমন কর্মকাণ্ড কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজারে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। কাল শনিবার থেকে ওই ল্যাবের সেবা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক জরুরি ত্রাণ সহায়তার দপ্তর ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কার্যক্রম কমিয়ে আনার পাশাপাশি সেখানে বিদেশি নাগরিকদের যাতায়াত সীমিত রাখা, শিবিরে মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ২৪ তারিখ রোহিঙ্গা শিবিরে স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তবসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধ বান্ধব কেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। তবে নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত বহুমাত্রিক কেন্দ্রগুলো কোভিড-১৯ বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজের জন্য চালু রাখা হয়েছে।