শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া নারীর লাশ দাফনে বাধা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারে মারা যাওয়া এক নারীর লাশ দাফনে বাধা ও সড়কে গাছের গুঁড়ি পেলে ব্যারিকেড দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় ওই নারীর ভাইসহ তিনজন আহত হন।

পরে আজ শনিবার সকালে পুলিশের উপস্থিতিতে দক্ষিণ খানপুর গ্রামে ওই নারীর (৫০) বাবার বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসায় ওই নারী অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। তিনি দীর্ঘ শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য গত ১২ থেকে ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মারা যাওয়া ওই নারীর নাম বিবি কুলছুম। তাঁর মেয়ে রেহানা আক্তার জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তাঁর বাবা রতন মিয়া মারা যান। ছয় মাসের বেশি সময় তাঁর মা শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন। তাঁর এক ভাই চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। টাকার অভাবে তাঁরা তাঁর মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ১২ মার্চ তাঁর মাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ১৬ মার্চ চিকিৎসকেরা তাঁর মাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

রেহানা জানান, গতকাল বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার বাসায় অসুস্থ অবস্থায় তাঁর মা মারা যান। এরপর তাঁরা তাঁদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ খানপুরে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে আসেন। রাত ১০টার দিকে লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢোকার সময় তাঁর দাদার বাড়ির ও এলাকার লোকজন বাধা দেন। তাঁরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক বন্ধ করে দেন এবং লাশের সঙ্গে থাকা তাঁদের লোকজনকে মারধর করেন। পরে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-উর-রশিদ প্রথম আলোকে জানান, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা নারীর মৃত্যুর পর করোনায় মারা গেছেন বলে মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে লাশ দাফনে বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয় লোকজন ওই গ্রামে পুলিশের গাড়ি ঢুকতেও বাধা দেন। তিনি হ্যান্ড মাইক দিয়ে বুঝিয়ে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন কথা না শোনায় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। গতকাল রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।

ওসি হারুন-উর-রশিদ বলেন, মারা যাওয়া নারীর হাসপাতালের ছাড়পত্রে তিনি শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারের রোগী ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি উত্তেজিত লোকজনকে জানানোর পরও তাঁরা লাশের গাড়ি নিয়ে গ্রামে ঢুকতে দেননি। উদ্ভূত পরিস্থিতি একই গ্রামে নারীর বাবার বাড়ির এলাকার লোকজনকে বুঝিয়ে তাঁদের কবরস্থানে লাশ দাফনে রাজি করান। রাতভর সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। পরে আজ সকাল নয়টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে ওই নারীকে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রছুল বলেন, স্থানীয় কিছু লোকের কারণে এলাকায় চরম এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। লাশটি দাফনে বিলম্ব হয়েছে। পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।