করোনা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ঘাটতি, তাই অবসর চান বিভাগীয় প্রধান!

বরিশালে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে পিসিআরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। প্রশাসনিক ভবন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল। ছবি: প্রথম আলো
বরিশালে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে পিসিআরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। প্রশাসনিক ভবন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল। ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার গবেষণাগার স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। আবার নেই এই অতি-স্পর্শকাতর পরীক্ষার জন্য দক্ষ জনবল। এসব নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। এ অবস্থায় একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের অবসরে যাওয়ার আবেদন জমা দেওয়ার খবর বেরিয়েছে।

ওই চিকিৎসকের নাম অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেইন। তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান। এ বিষয়ে জানতে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর হোসেইনের মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। আজ শনিবার তিনি নিজ বিভাগে অবস্থান করলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

তবে এই খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ অসিত ভূষণ দাস। একই সঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এ খবরকে অসত্য বলে উল্লেখ করেছেন।

জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অসিত ভূষণ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেনের অবসরের আবেদন করার খবরটি সত্য নয়। আর ল্যাবটির অবকাঠামোর কাজ এখনো চলছে। আমরা ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ টেকনিশিয়ানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। তার আগে স্থানীয় চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের দিয়েই এটি পরিচালনা করা হবে।’

কলেজ সূত্র জানায়, অতি-স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক ভাইরাস করোনা। এই ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একটি কক্ষে ল্যাবটি স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটি পরিচালনার জন্য এখনো বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্ট এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান পদায়ন করা হয়নি। একই সঙ্গে তাঁদের কারা পর্যবেক্ষণ করবেন তাও নির্ধারণ হয়নি। এ ছাড়া গবেষণাগারটি কীভাবে পরিচালিত হবে, সে ধরনের খসড়া নীতিও (প্রোটোকল) চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-টেকনিশিয়ানদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক রয়েছে।

এই মেডিকেল কলেজে ভাইরোলজি বিভাগ থাকলেও সেখানে কোনো শিক্ষক ও জনবল নেই। এই বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপকের পদ থাকলেও পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিভাগটিকে এখনো ওই পদে পদায়ন হয়নি। ফলে পাঁচ বছরেও এই বিভাগের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এ জন্য এই ল্যাবটি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসকদের দিয়ে পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁরাও এ নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, ভাইরাস পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য একজন টেকনিশিয়ানকে অন্তত তিন মাসের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেখানে এই কলেজে বিদ্যমান মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের টেকনিশিয়ানদের সাত দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব টেকনিশিয়ানেরা কতটা নিপুণভাবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজটি করতে পারবেন সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

এ অবস্থায় কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেইন অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছেন, এমন খবর ছড়িয়েছে। তাঁর চাকরির মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবের দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ থেকে তিনি মেয়াদ শেষ হওয়া আগেই গত মঙ্গলবার এই আবেদন করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকবর কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণাগারটি অবকাঠামোর কাজ এখনো চলছে। যেহেতু এটা খুবই স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক ভাইরাস। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কক্ষটি প্রস্তুত করতে সময় লাগছে। তিনি বলেন, করোনা খুবই বিপজ্জনক এক ভাইরাস। এ জন্য এটা বিশেষজ্ঞ (এক্সপার্ট) ভাইরোলজিস্ট ছাড়া কোনোভাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা নিরাপদ নয়। বলতে গেলে সম্ভব নয়। দেশের খ্যাতনামা ভাইরোলজিস্টরাও এমন মতামত দিয়েছেন। এতে হিতে-বিপরীত হতে পারে।