সাইকেলে অলিগলি ঘুরে মানুষকে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন করছেন জামালপুরের বরকত

পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মতোই মনে করেন বরকত মিয়া। তাই নিজের ‘অস্ত্র’ পুরোনো বাইসাইকেলটি নিয়েই ‘যুদ্ধে’ (পড়ুন জনসচেতনতা সৃষ্টিতে) নেমে পড়েছেন এই ‘যোদ্ধা’। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মতোই মনে করেন বরকত মিয়া। তাই নিজের ‘অস্ত্র’ পুরোনো বাইসাইকেলটি নিয়েই ‘যুদ্ধে’ (পড়ুন জনসচেতনতা সৃষ্টিতে) নেমে পড়েছেন এই ‘যোদ্ধা’। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

‘বারবার হাত ধোন’, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’, ‘করোনামুক্ত দেশ গড়ুন’, ‘প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না’, ‘মাস্ক ব্যবহার করুন’। এসব স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে বাইসাইকেলের সামনে ও পেছনে। বাইসাইকেলটি নিয়ে জামালপুর শহরের অলিগলি ঘোরেন বরকত মিয়া (৩৪)। এভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করেন এই যুবক।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের ফৌজদারি এলাকায় কথা হয় বরকত মিয়ার সঙ্গে। পরনে লুঙ্গি, পায়ে সাধারণ হাওয়াই চপ্পল, মুখে মাস্ক। পোশাকে সাদামাটা হলেও চোখদুটো জ্বলজ্বলে এই যুবকের। বরকত কাঁচামালের দোকানের কর্মী। দৈনিক ৩০০ টাকা বেতন পান। পড়াশোনা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। বাস করেন জামালপুর শহরের পাথালিয়া এলাকায়। বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। সামান্য আয় দিয়েই তিনি স্ত্রী ও এক সন্তানের সংসার চালান। এর মধ্যেই ভয়ংকর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাই বসে থাকতে পারেননি বরকত।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনায় জামালপুরেও সব গণপরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা-উপজেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে দিনরাত কাজ করছে। কিন্তু তারপরও সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাফেরা করছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই তাই নিজের বাইসাইকেলটি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন বরকত। গত বুধবার থেকে তিনি করোনা নিয়ে নিজস্ব প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেন।

বরকত মিয়া বাসায় বসে বসে তিনটি প্ল্যাকার্ডে লেখেন। লেখা শেষ করেই প্ল্যাকার্ড তিনটি তিনি বাইসাইকেলের সামনে ও পেছনে লাগান। এরপর তিনি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তিনি শহরের পাথালিয়া, ব্রজাপুর, বানিয়াবাজার, পুরাতন ফেরিঘাট, গুয়াবাড়িয়া, চন্দ্রা, কলেজ রোড, পশ্চিম নয়াপাড়া, গোলাপবাগ, দেওয়ানপাড়া, রশিদপুর, বাইপাস, কম্পপুর, ফৌজদারি, বকুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই কাজ করোনামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন বলে জানান।

বরকত মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭১ সালে যেমন শত্রুরা আমাদের দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নির্বিচারে মেরেছেন। একইভাবে করোনাভাইরাসও মানুষ মারার বড় অস্ত্র। তাহলে এই ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ আবার ব্যতিক্রম। কারণ করোনাভাইরাস দৃশ্যমান নয়। একটি অদৃশ্য বস্তু। এর থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। তাতে নিজে বাঁচা যাবে এবং অন্যকে রক্ষা করা যাবে। হঠাৎ করে মনে হলো, এই যুদ্ধে আমিও অংশ গ্রহণ করব। তাই আমার সামান্য বাইসাইকেল নিয়ে গত চার দিন ধরে ঘুরে ঘুরে মানুষকে ঘরে থাকতে বলছি।’ তিনি বলেন, ‘এভাবেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার দেখাদেখি হয়তো আরেকজন এই কাজটি করতে পারে। এভাবেই সবাই মিলে এর মোকাবিলা করব।’