'সামাজিক দূরত্ব, হেইডা আবার কী, আমরা আইছি চাউল নিতে'

চাঁদপুর
চাঁদপুর

দুপুর ১২টা। উপজেলা পরিষদ চত্বরে বেশ কয়েকজন নারীর জটলা। সরকারি খাদ্য সহায়তা পাওয়ার আশায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার কারণ জানতে চাওয়ামাত্র এক নারী বলে উঠলেন, ‘হেইডা আবার কী? আমরা আইছি চাউল নিতে। চাউলডা পাইলেই চইলা যামু। করোনারে ভয় করি না। আগে খাইয়া বাঁইচ্চা লই।’

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের উপজেলা পরিষদ এলাকায় আজ শনিবার দুপুরের চিত্র এটি। শুধু ওই নারীরাই নন, উপজেলার অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষই সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে সচেতন নন।

উপজেলার কলাদী এলাকার গৃহকর্মী রুনু বেগম, হাসিনা আক্তার ও হাজেরা বেগম বলেন, ‘করোনা আওনের পরে বাসা-বাড়িতে আমাগো কাম বন্ধ। মালিকেরা টেয়াও দেন নাই। এলিগা উপজেলায় আইছি চাউল-ডাইলের লইগা। অনেকে পাইছে আবার অনেকেই পায় নাই। মাইনষে ক্যাল কয় বাইরে গেলে সামাজিক দূরত্ব রাখতাম। কিন্তু হেইডা কি তা কেউই ভালা কইরা বুঝায় না। না বুঝলে ক্যামনে মানুম।’

সকাল নয়টায় উপজেলার কলেজ গেট এলাকায় গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে সঙ্গে কথা বলছিলেন আট-দশজন। কারও মুখেই মাস্ক নেই। কথা বলতে বলতে এঁদের দু-তিনজন মুখ না ঢেকেই বেশ কয়েকবার হাঁচি-কাশি দেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলার কারণ জিজ্ঞেস করতেই নবকলস এলাকার রিকশাচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘সমাজে থাকতে অইলে দূরত্ব রাইখা চলুম ক্যামনে? দূরত্ব রাখলে পরপর মনে অয়। আর কাছে থাকলে আপন মনে অয়। টিভিতে সামাজিক দূরত্বের কথাডা হুনলেও এইডা বুঝি না।’ পাশে দাঁড়ানো ভ্যানচালক আবদুল লতিফ বলেন, ‘খোলসা কইরা এইডা কেউই বুঝাইয়া কয় না। হারা জীবন মাইনষের কাছে থাইক্কা চলছি, খাইছি-পড়ছি, গল্পগুজবও করছি। এহন করোনার ভয়ে দূরত্ব রাখতে পারুম না।’

উপজেলা সদরের মাছ ও কাঁচা তরকারির বাজার, ওষুধ ও মুদি দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে সওদা কিনছেন। বোয়ালিয়া এলাকার দিনমজুর মো. তৈয়ব আলী বলেন, ‘মাছবাজারে মাইনষের লগে ধাক্কাধাক্কি কইরা কিছু মাছ কিনছি। ভিড় ঠেইল্লা কিছু কাঁচা তরকারিও কিনছি। অনেকে কয়, সামাজিক দূরত্ব রাখতে। দূরত্বে থাকলে জিনিসপত্র কিনুম ক্যামনে।’

মতলব সরকারি কলেজের দুজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘নিরক্ষর, স্বল্পশিক্ষিত, আধাশিক্ষিত ও গরিব-দুস্থ অনেক মানুষই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনাটি ভালো করে বোঝেন না। শিশু-কিশোরদেরও এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই। সহজ করে গণমাধ্যমে প্রচার করলে বিষয়টি সবাই ভালো করে বুঝতে পারত। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব কথাটির পরিবর্তে শারীরিক দূরত্ব শব্দ দুটি ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য হতো।