করোনার এই সময়ে বিয়ে করতে এসে নাজেহাল চিকিৎসক

মশিউর রহমান (৩২) পেশায় চিকিৎসক (এমবিবিএস)। বাড়ি বগুড়ার সোনাতল গ্রামে। বিয়ে করেন পাঁচ বছর আগে, স্ত্রী পেশায় নার্স। দুটি মাইক্রোবাসে করে লোকজন নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আসেন দ্বিতীয় বিয়ে করতে। আগে বিয়ে করেছেন—এমন তথ্য জানা ছিল না হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। আবার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করছেন—তথ্যটি জানা ছিল না প্রথম স্ত্রীরও।

বিয়ের খবর পাওয়ার পর ভৈরবে ছুটে আসেন প্রথম স্ত্রী। তিনি সোজা গিয়ে উপস্থিত হন বিয়েবাড়িতে। সবকিছু জানার পর হবু শ্বশুরালয়ের লোকজন মশিউরকে উত্তমমধ্যম দিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা। করোনাকালে বিয়ে করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান ইউএনও। তিনি বর ও কনেপক্ষকে ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চিকিৎসকের দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসার এ ঘটনা গতকাল শুক্রবার দুপুরের। উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ফাঁড়ি রঘুনাথপুর গ্রামে কনের বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযান ও দণ্ড ঘোষণার ঘটনা ঘটে।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বগুড়ার সোনাতলা গ্রামে বাড়ি হলেও মশিউর পেশাগত প্রয়োজনে থাকেন ঢাকায়। বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। প্রথম বিয়ে করেন ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে। স্ত্রী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স। শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলার সময় প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হওয়ার কারণে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। যেহেতু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে এবং অধিক জনসমাগম হয়—এমন ধর্মীয় ও সামাজিক আয়োজনেও একই আদেশের আওতায় রয়েছে, তাই বিয়ের আয়োজন করে বর ও কনেপক্ষ উভয়ই আইন ভঙ্গ করে। এই কারণে বরের মাকে ২০ হাজার এবং কনের বাবাকে ২০ হাজার টাকা দণ্ড দেওয়া হয়।

কনের বাবা বলেন, ‘ছেলের ঢাকার বাসায় দুবার গেছি। সবকিছু দেখে ছেলে পছন্দ হয়েছে। কথা ছিল ছেলেপক্ষ আসবে আমাদের বাড়িতে। আসার পর যদি পছন্দ হয়, তাহলে ওই দিন বিয়ে হয়ে যাবে। শুক্রবার ছেলেপক্ষ এসে আমাদের পছন্দ করে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমরাও রাজি হয়ে যাই। আগের বিয়ের তথ্য আমাদের কাছে গোপন করা হয়েছে।’

আইন অমান্য করে বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কনের বাবার বক্তব্য, করোনার কারণে ছোট করে আয়োজন করা হয়েছিল।

এদিকে মশিউরের প্রথম স্ত্রী বলেন, ‘ছয় মাস ধরে মশিউর আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিয়ের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানাননি। পরে শ্বশুরবাড়ির একজনের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে এখানে এসেছি।’

করোনার সময় একদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, আরেক দিকে চিকিৎসাসেবা বাদ দিয়ে গোপনে বিয়ে করতে আসা ঠিক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মশিউর কোনো উত্তর দেননি। মাথা নিচু করে থাকেন। দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসার আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়েছিলেন কি না—এমন প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেননি মশিউর।

ইউএনও লুবনা ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, দেশের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে একজন চিকিৎসকের এমন ভাবনা হতাশ করেছে। তবে এই ক্ষেত্রে অপরাধী দুই পক্ষই। এ কারণে দুই পক্ষকেই অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।