রাজশাহীতে ত্রাণের আশায় মোড়ে মোড়ে গৃহবধূরা

রাজশাহী
রাজশাহী

মুখে মাস্ক। মাথায় কাপড়। চোখে অসহায় চাহনি। চেয়ে আছেন পথের দিকে—কেউ যদি কোনো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। আজ শনিবার রাজশাহী নগরের মহল্লার বিভিন্ন মোড়ে জোড়া জোড়া এমন অসহায় চোখের নারীদের দেখা মিলল। এঁদের বেশির ভাগই শ্রমজীবীদের স্ত্রী। যাঁরা কখনো খাবারের খোঁজে বাইরে বের হননি। কেউ কেউ নিজেরাই কাজ করে খান, কিন্তু এখন বেকার।

কমলা দেবী গৃহবধূ। তাঁর স্বামী আবাসিক হোটেলে চাকরি করেন। স্বামীর রোজগারেই সংসার চলে। কমলা এত দিন শুধু ঘর সামলিয়েছেন। কোনো দিন খাবার জোগাড় করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হয়নি তাঁকে। সেই কমলা মহল্লার মোড়ে বসে আছেন সাহায্যের আশায়। তিনি বললেন, এখন সংসার চলছে না। ছেলেমেয়েদের সামনে দাঁড়াতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বাইরে এসে বসে রয়েছেন। শুনছেন, বিভিন্ন লোকজন সাহায্য নিয়ে আসছেন। যদি এক মুঠো পান, সেই ভরসায় অপেক্ষা করছেন। তখনো এই এলাকায় কেউ সাহায্য নিয়ে আসেননি।

শুধু কমলা নন, বিভিন্ন শ্রেণির কর্মজীবী ব্যক্তির স্ত্রীকে নগরের মোড়ে আলুপট্টি মোড়ে দৈনিক বার্তা ভবনের পাশে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁরা কাউন্সিলরের দেওয়া ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু এই স্বল্প ত্রাণ শেষে তাঁরা কী করবেন, তাই আরও সাহায্যের আশায় বসে আছেন।

বেলা ১১টার দিকে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। এক নারী বললেন, তাঁর স্বামী ধোপা। স্বামী যে আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে যায়। প্রায় ১০ দিন থেকে স্বামীর কাজ বন্ধ। ওই নারী বলেন, বাড়িতে তিন মেয়ে আর তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন। কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে চার কেজি চাল, এক কেজি আলু ও এক পোয়া ডাল পেয়েছেন। এতে কয়দিন যায় বলেন?

চন্দনা রানির স্বামী কারখানায় কাজ করেন। এখন কারখানা বন্ধ, বেতনও বন্ধ। সংসার চলছে না। বাধ্য হয়ে তিনি বাইরে এসেছেন। কোথাও কিছু মেলাতে পারেন কি না, সেই আশায় বসে রয়েছেন। শুনেছেন, অনেকেই সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন। যদি কিছু পান, খেয়ে বাঁচতে পারবেন।

ওই দলে আরও কয়েকজন ছিলেন, তাঁদের স্বামী অল্প রোজগার করেন। তাঁরাও বাসাবাড়িতে কাজ করেন। অন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেরাই খেটে খান। এখন স্বামীদেরও কাজ নেই, তাঁদেরও বাসাবাড়িতে যাওয়া বন্ধ। তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। এ রকম একজন যতন রানি। তিনি বললেন, বড় কঠিন সময় যাচ্ছে। একটা মেয়ে, দুইটা নাতি সবই তাঁর ঘাড়ে। তাঁদের জন্য ভাবার আর কেউ নেই। এই জন্য তিনিই গলির মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছেন। যদি কেউ কিছু দেন।

দোকানে দোকানে খাবার পানি সরবরাহ করতেন রেনু বেগম। তাঁর স্বামী শহরে অটোরিকশা চালান। এখন দুজনেরই রোজগার বন্ধ। তিনি বলেন, জোয়ান মানুষ দেখে তাঁকে কেউ অসহায় মনে করছেন না। এ জন্য কিছু দিচ্ছেন না। কাজ করেই খান, কোনো দিন কারও কাছে হাত পাততে হয়নি। বাধ্য হয়ে সাহায্যের আশায় রাস্তার মোড়ে এসে বসেছেন।