সুযোগে ট্রাক্টর ভরে লুট হচ্ছে তিস্তার বালু

লালমনিরহাট
লালমনিরহাট

করোনাভাইরাসের সময়ের সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহ আইন শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই সুযোগে তিস্তার বালু ট্রাক্টর ভরে লুটে নিচ্ছে একদল চিহ্নিত বালু সন্ত্রাসী।

অবাধে বালু লুটের এ ঘটনা ঘটছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গোকুন্ডা গ্রামে। 

লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে দুটি গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা রেলওয়ে তিস্তা সেতু এবং তিস্তা সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদী। এই স্থাপনা দুটির পূর্বদিকে চর গোকুন্ডা গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর শুকনা বুক থেকে এই বালু তুলে লুট করা হচ্ছে। খননের অভাবে শুকিয়ে গেছে তিস্তা নদী। নদীর বুকে ধু ধু বালু চর আর বালুর স্তূপ। সেখান থেকেই বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে।

প্রতিদিন দিবাগত রাত তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক্টর দিয়ে বালু তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতি ট্রাক্টর বালু এক হাজার থেকে ১২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই টাকার ভাগ পাচ্ছেন ট্রাক্টর মালিক, শ্রমিক, প্রভাবশালী মহল ও ব্যক্তি।

চর গোকুন্ডা গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে সামরিক বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা শামসুল হক (৬০) বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে ফেলে এভাবে অবৈধভাবে নদীর বুক থেকে বালু লুট করে নেওয়ায় আগামী বর্ষায় নদী ভাঙন তীব্র হবে। সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আদায় থেকে। আর লাভবান হচ্ছে এক শ্রেনীর বালু সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

চর গোকুন্ডা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদীর বুক থেকে বালু তুলে ট্রাক্টরে ভরছেন শ্রমিকরা। আর সেগুলো তদারক করছেন কয়েকজন। শ্রমিকেরা জানালেন,করোনাভাইরাসের কারণে এ সময়ে বাইরে কোনো কাজ নেই। ট্রাক্টর মালিকেরা তাঁদের বালু ভরতে বলেছেন। তাই তাঁরা বালু তুলছেন। অনুমতি আছে কি নেই তা তাঁদের জানা নেই।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন চর গোকুন্ডা গ্রামের বদিয়ার রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান (৩০) এবং একই গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে আখের মিয়া (২৫) । সাইদুর রহমান এর আগে তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তিনি তিন মাসের সাজা ভোগ করেন।

বালু তোলা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে সাইদুর রহমান বলেন, 'আমরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলি না। আমরা কোদাল ও বেলচা দিয়ে বালু তুলি, এতে দোষের কিছু নাই। হাতে কোনো কাজ নাই,তাই নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে শ্রমিকদের দিই, নিজেদেরও কিছু থাকে।'তিনি বলেন, নেতাদের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলে বালু তোলার কাজ করছেন।

সাইদুর রহমান স্বীকার করেন, ২০১৪ সালে তিস্তা সড়ক সেতুর নিচ থেকে বালু তোলায় ভ্রাম্যমান আদালত তাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের জেল দেন।

গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, 'তিস্তা নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়টি আমি প্রশাসনসহ লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করেছি। ওদেরও (বালু লুটের সঙ্গে জড়িত) নিষেধ করেছি, ওরা কথা শোনে না। এখন আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, 'চর গোকুন্ডা গ্রামে তিস্তা নদী থেকে বালু তোলার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা গেলে ওরা পালিয়ে যায়। একবার হাতে নাতে ধরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'