অসুস্থ দুই শিক্ষার্থীর পাশে গুরুদাসপুরের ইউএনও

অভাব অনটনের সংসারে মাষ্টার্সে পড়ুয়া অসুস্থ মেয়েটির চিকিৎসা হচ্ছিল না টাকার অভাবে। তার ওপর করোনাভাইরাস নিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে আয় উপার্জনও বন্ধ হয়ে পড়ে দরিদ্র বাবার। সংসারের খাবার যোগান আর উচ্চ শিক্ষিত মেয়েটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরে পরিবারটি।

বাবার দৈন্যদশা, নিজের চিকিৎসা আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে অসুস্থ মেয়েটি শরণাপন্ন হন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও)। ওই কর্মকর্তার ফেসবুক পেজ থেকে মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে গত মঙ্গলবার সহায়তা চান মেয়েটি।

মেয়েটির সহায়তা চেয়ে আবেদন আর পরিস্থিতি বিবেচনায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ইউএনও মো. তমাল হোসেন। বুধবার মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে গাড়িতে করে প্রথমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী পাঠান। সেখানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর।

এর আগে গত ২৭ মার্চ কলেজ পড়ুয়া আরেক অসুস্থ ছাত্রীকে রাজশাহী নিয়ে চিকিৎসা করান ওই কর্মকর্তা। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দুই ছাত্রীর চিকিৎসা ব্যয় করছেন তিনি।

মাষ্টার্স পড়ুয়া ওই ছাত্রী জানান, তাঁরা দুই বোন দুই ভাই। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে মাষ্টার্স করছেন। তাঁর ছোট বোন কলেজে পড়ে। আরেক ভাই নবম শ্রেনিতে পড়ছে। সবার বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। তাঁর বাবার যৎসামান্য জমি রয়েছে। ভাই বোনদের পড়ালেখার খরচ আর সংসার চালাতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে।

সম্প্রতি ওই ছাত্রী দাঁতের সমস্যায় পড়েন। স্থানীয় একজন দন্ত্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে থাকেন। পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। পরে ওই চিকিৎসকের পরামর্শে রোগাক্রান্ত দাঁত তুলে প্লাষ্টিকের দাঁত বসিয়ে নেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে দাঁতে পঁচন ধরে। ছড়ায় দুর্গন্ধ। সেই সঙ্গে মারাত্মক যন্ত্রণা শুরু হয়। কিন্তু পরিবারের অবস্থার কথা ভেবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না তিনি। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা চান।

ওই ছাত্রীর ছোট ভাই জানায়, ভর্তির পর থেকে তাঁর বোনের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ওষুধ খাচ্ছেন। যন্ত্রণা নেই। চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগামী ৭-১০দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ তাদের পরিবার।


অপর দিকে একটি কারিগরি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব পরিবহনে বাড়ি থেকে রাজশাহীতে নিয়ে চিকিৎসা করান ইউএনও মো. তমাল হোসেন। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ছাত্রীটি এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন। ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁর দিনমজুর বাবা।

দুই ছাত্রীকে মানবিক সহায়তা দেওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, উপজেলায় যোগদানের পর থেকে বাল্যবিবাহ ও করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতাসহ নানা রকম সামাজিক কাজ করছেন তিনি। এজন্য উপজেলা জুড়ে সচেতনতামুলক বিলবোর্ড এবং ফেসবুক পেজ রয়েছে তাঁর। নানা সমস্যা নিয়ে মানুষ সেখানে থাকা মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে। সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক কাজ করেন তিনি মানবিক মূল্যবোধ থেকে।


তমাল হোসেন বলেন, সম্প্রতি দুই ছাত্রীর আকুতি হৃদয়ে দাগ কাটে তাঁর। তাঁর অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। যাতে করে দরিদ্র পরিবারের দুই ছাত্রী পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরে সংসারের অভাব মেটাতে পারেন। তাছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে প্রশাসনের তৎপরতায় দরিদ্র-শ্রমজীবি মানুষের আয় কমেছে। খাবার যোগানের পাশাপাশি চিকিৎসা খরচ চালানোর অবস্থা তাঁদের নেই। তিনি জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিজস্ব পরিবহন ও অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে দুই ছাত্রীকে রাজশাহী পাঠানো হয়েছে। দুই ছাত্রীর চিকিৎসার সব খরচ নিজ তহবিল থেকে বহন করেছেন।